অর্ধশত বছর ধরে শ্রেণিকক্ষ সংকট, খোলা জায়গায় চলছে পাঠদান
কুমিল্লার মুরাদনগরে শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটে খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক ও অভিবাবকরা দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার চাপিতলা ইউনিয়নের ৫৭নং পুস্করিনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। প্রতি বছর সাফল্যে সুনাম অর্জন করায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না স্কুলের সুযোগ সুবিধা।
শিক্ষক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৩৩ সালে পুস্করিনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি হলে সরকার ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে দেয়। বর্তমানে ভবনটির একটি রুমে অফিস কক্ষ অপরটিতে শিশু শ্রেণির ক্লাস চলমান রয়েছে। এই ভবনটিও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এমতাবস্থায় স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে স্থানীয়দের সহায়তায় ২০২২ সালে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। এরপরও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট থাকায় খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে ২৫০ জন শিক্ষার্থী।
চতুর্থ শ্রেণির সুমা ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তারেকসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টির মাঝে ক্লাস করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাস থেকে বিরত থাকতে হয়। আমাদের দুর্ভোগ দূর করতে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. সেলিম সরকার বলেন, আমি সভাপতি থাকা অবস্থায় একটি পুরাতন ভবন ছিল। ভবনটি জরাজীর্ণ থাকায় ২০২২ সালে ওই ভবনটি নিলামের মাধ্যেমে ভেঙে ফেলা হয়। ফলে স্কুলটি শ্রেণিকক্ষ সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। পরে আমি স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি টিনের ঘর নির্মাণ করি। এতেও শ্রেণিকক্ষ সংকট শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে বাধ্য হয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে।
পুস্করিনীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তামান্না আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এরপরও কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
মুরাদনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নতুন ভবনের ব্যাপারে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই নতুন ভবনের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। সমস্যা সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।
জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/জেআইএম