করোনা আতঙ্কে কুষ্টিয়ায় বেড়ে গেল চালের দাম
করোনাভাইরাস আতঙ্কে হঠাৎ করেই কুষ্টিয়ায় সব ধরনেরর চালের দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে যেখানে মিনিকেট চাল (চিকন চাল) কেজি প্রতি ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। এখন সেখানে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে স্বর্ণা, কাজললতা ও আঠাশ চালের দামও মিনিকেট চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কেজি প্রতি ২ টাকা করে বেড়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যে কোনো সময় অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে এমন গুজবে গত দুদিন ধরে কুষ্টিয়ার পৌর বাজার, বড় বাজারসহ স্থানীয় বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন- হঠাৎ করেই মিল গেট থেকে চালের আমদানি কমে যাওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে হঠাৎ করে কুষ্টিয়ায় সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসন চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে চালের দাম বাড়ালে জেল- জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ( ১৮ মার্চ) বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার তার কক্ষে জেলার চাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে এ জরুরি বৈঠক করেন। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ বৈঠকে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাজী আব্দুর রশিদ, জেলা চালকল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন, জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আব্দুস সামাদ, সাধারণ সম্পাদক হাজী জয়নাল আবেদীন, কুষ্টিয়া চেম্বারের সহ-সভাপতি এস এম কাদেরী শাকিল, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোয়ার হোসেন, বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতেই কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চান হঠাৎ করে কেন চালের দাম বাড়ানো হলো। জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা চালের দাম বৃদ্ধি করেননি। পূর্বের রেটেই তারা মিল গেটে চাল বিক্রি করছেন। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের কারণে হঠাৎ করেই কুষ্টিয়ায় চাল কেনার হিড়িক পড়েছে। মানুষ আতঙ্কে বস্তা বস্তা চাল কিনে রাখছেন। আর এই সুযোগকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন।
সব কিছু শুনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, দেশে এখন ক্রাইসিস চলছে। আমরা করোনাভাইরাসের মত ঘাতক মহামারিকে মোকাবেলা করছি। এমন দুযোর্গ মুহূর্তে কেউ যদি অধিক মুনাফা লাভের আশায় চালের দাম বৃদ্ধি করে সেই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি প্রদান করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কুষ্টিয়ার বড়বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় চাল কেনায় হুলুস্থুল পড়ে যায়। যে যেমন পেয়েছেন সর্বনিম্ন ৫০ কেজির এক বস্তা থেকে চার বস্তা চাল কিনে বাড়ি ফিরেছেন। এ সময় হঠাৎ করেই ব্যবসায়ীরা পূর্বের চাইতে কেজি প্রতি চালের দাম ২-৩ টাকা বেশি রেখে ক্রেতাদের কাছে চাল বিক্রি করেন।
কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার এলাকার বিশ্বনাথ অ্যান্ড সন্সের দোকানে সকাল থেকে এক দুই বস্তা করে বড় বাজারের দোকান, সামনের দোকান এমনকি বাড়ির গোডাউন ঘরে সংরক্ষিত প্রায় ২ হাজার বস্তা বিশ্বাস মিনিকেট চাল দুপুরের আগেই শেষ হয়েছে। তার সঙ্গে বিকেল থেকে বড় বাজার, পৌর বাজারের কয়েকটি দোকান থেকে বিশ্বাস মিনিকেট চাল একেবারে শেষ হয়ে যায়। কুষ্টিয়া পৌর বাজারে বর্তমানে মিনিকেট চাল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই তিন দিন আগেও এই মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে। একই সঙ্গে স্বর্ণা, কাজললাতা এবং আঠাশ চাল কেজি প্রতি ২-৩ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
হঠাৎ চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পৌর বাজারের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান, মিল গেটে চালের আমদানি কমে গেছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চাল আসছে না। মিল মালিকরা বাজারে চাল না ছাড়ায় চালের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। তাছাড়া করোনাভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ এক বস্তার জায়গায় দুই থেকে তিন বস্তা কেউ কেউ আবার তারও বেশি পরিমাণ চাল কিনে রাখছেন।
বৃহস্পতিবার বড়বাজার এলাকায় পাইকারি ৫০ কেজির মিনিকেট চাল ২৪০০ টাকার পরিবর্তে ২৪৭০ টাকা আর খুচরা ২৪৫০ টাকার পরিবর্তে ২৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোল্ডেন ( রশিদ এগ্রো ফুড) মিনিকেট চাল প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ২৪৫০ টাকার পরিবর্তে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০০০ টাকার কাজল লতা ৫০ কেজির বস্তা ২০৮০ টাকা আর ১৭০০ টাকার আঠাশ চাল ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দাম বেড়েছে।
এ ব্যাপারে বড় বাজার এলাকার কয়েকজন পাইকারি চাল বিক্রেতা জানান, তিন/চারদিন আগেই সব মিলগুলো চাল দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বাস সকলের আগে বন্ধ করেছে। এখন বাজারে মিনিকেট রশিদের গোল্ডেন, বাশমতি, কাজলতা আর আঠাশ ছাড়া কিছু নেই। খুচরা পর্যায়ে প্রকার ভেদে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২-৩ টাকা।
শহরের নতুন বড় বাজার, পৌরবাজার, মঙ্গলবাড়িয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চাল কেজি প্রতি ৩৫ টাকা, মাঝারি চিকন চাল ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৩ টাকা বেড়ে ৫২ টাকা এবং বাসমতি ৫২ টাকা থেকে বেড়ে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, চাল আমাদের দেশে উৎপাদিত একটি পণ্য। এতে ঘাটতি হওয়া বা না পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। লবণের মত চাল নিয়ে কেউ যদি কোনো গুজব সৃষ্টি করে তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা জানান, করোনাকে পুঁজি করে কোনো গুজবকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। চাল আমাদের দেশীয় একটি পণ্য। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোনো সুযোগ নেই।
আল-মামুন সাগর/আরএআর/পিআর