বাংলাদেশের অনেক ছেলে বিদেশের গবেষক-বিজ্ঞানী, এদের দেশে আনুন
বিশ্বের অন্তত ১৭২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী। বিশেষ করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব রেখেছেন এই বিজ্ঞানী।
বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে বিজ্ঞানী জহিরুল আলম সিদ্দিকী উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের গবেষক ও ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট বা ইনফেকশাস ডিজিজ নির্ণয়ের সরাসরি অভিজ্ঞতা আছে; এমন বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ খুব ভাগ্যবান। কারণ বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে অনেক তরুণ দেশের জন্য কিছু করতে চায়। সরকারের উচিত এদের অভিজ্ঞতাকে দেশের দুর্দিনে কাজে লাগানো। বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর ভয়াবহতা কেমন হবে তা ভাবলে চোখে অন্ধকার দেখি, তাই এই অযাচিত কথাগুলো বলা। আমার মা-বাবা দুজনেই বৃদ্ধ। তাদের ইমিউনো সিস্টেম কোভিড-১৯-কে প্রতিহত করতে পারবে বলে মনে হয় না। ১৬ কোটি মানুষের দেশে আমার মা-বাবার বয়সী যারা আছেন; শুধু তাদের কথা চিন্তা করলেই শরীর অবশ হয়ে আসে। আরও কিছু কথা হলো কোভিড-১৯ শুধু বৃদ্ধদের নয়, যেকোনো বয়সের মানুষের ইমিউনো সিস্টেমকে কাবু করে দিতে পারে এবং দিচ্ছে। যারা বলেন যে গরম এবং হাই হিউমিডিটিতে কোভিড-১৯ বাড়তে পারে না বা ইনফেকশন ছড়াতে পারে না- তাদের বলি, এসব বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
করোনা প্রতিরোধে আমার প্রথম প্রস্তাব হলো- বাংলাদেশের অনেক গবেষক এবং ফ্রন্ট লাইনের মেডিকেল প্রফেশনাল আছেন; যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাইরাস নিয়ে অনেক উঁচুমানের গবেষণা করছেন। কোভিড-১৯ আগের যত বড় ভাই এসেছিল- যেমন সার্স, ইবোলা, সোয়াইন ফ্লু (এইচ-১ এন-১) ইত্যাদি প্রতিরোধে এসব বাংলাদেশি গবেষকদের অভিজ্ঞতা আছে। অনেকেই বিভিন্ন ভাইরাসের প্রতিষেধক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন। আমি এখানে কারও নাম উল্লেখ করছি না। এতদিন বাংলাদেশ সরকার গবেষণায় তেমন কিছুই বিনিয়োগ করেনি। বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেনি। শুধু বাংলাদেশের দোষ দেব কেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই গবেষণাকে মনে করা হয় ‘আকাম’। বিশ্বাস করা হয় গবেষকরা যা করে তা দিয়ে কোনো কাজে আসে না। এদের কাজ হলো শুধু কনফারেন্স করা আর দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো। অনেকে আবার এক লাইন সামনে- এদের ধারণা যাদের কোনো কিছু করার থাকে না তারাই গবেষণা করেন।
এসব লোকদের জন্য কোভিড-১৯ একটি জিনিস প্রমাণ করতে পেরেছে। হ্যাঁ, কিছু লোক আছে যাদের জন্যই মানব সভ্যতা এখনও টিকে আছে। মানুষের জীবনকে বিরুদ্ধে এরকম যত থ্রেট আসবে তা প্রতিহত করতে গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে। এখন কী বাংলাদেশ সরকার পারে না খুব দ্রুত বড় মানের একটি প্রজেক্ট সেট করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেসব বাংলাদেশি ভাইরাস ডিটেকশন অথবা ভাইরাসের প্রতিষেধক বানাতে কাজ করছেন; তাদেরকে দেশে নিয়ে এসে খুব দ্রুত সময়ে দেশের জন্য কিছু করতে বলা।
আমি ভাইরাস নিয়ে কাজ করি না। টুকটাক কাজ করি ক্যানসার নির্ণয়ের ওপর। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে পারি, কোভিড-১৯ ভাইরাস সস্পর্কে এখন পর্যন্ত যা তথ্য রয়েছে তা দিয়েই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি র্যাপিড ডিটেকশন পদ্ধতি বানিয়ে ফেলা সম্ভব।
বিশ্বব্যাপী চলমান কঠিন ট্রাভেল রেস্ট্রিকশনের মধ্যেও সরকার চাইলে এদেরকে বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসতে পারে। বেশি লোকের দককার নেই; মাত্র ১০ জন দেশপ্রেমী তরুণকে দেশে আনুন। যারা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ১৯৭১ সালের স্পিরিট নিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নামবে। আর তাদের সহযোগিতায় থাকবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।
আমার দ্বিতীয় প্রস্তাব : এটি যদি খুব অসম্ভব মনে হয় তবে আমার প্রস্তাব গ্রহণ করুন। আমাদের দেশের যত ওষুধ কোম্পানি আছে তাদের সিইওদের ডাকুন | তাদেরকে বলে দেন দেশের স্বার্থে তারা যেন তাদের কোম্পানির সবচেয়ে মেধাবী গবেষকদের, যাদের ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের বা ইনফেকশাস ডিজিজ নির্ণয়ের সরাসরি অভিজ্ঞতা আছে, যারা ইনফেকশাস ডিজিজের এপিডেমিওলজি ভালো বোঝেন এবং জানেন। তাদেরকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের এই প্রজেক্ট দেন। আমি হলফ করে বলতে পারি সব কোম্পানি খুশি মনে রাজি হয়ে যাবে।
আমার অনুরোধ, সরকারের সংশ্লিষ্ট যারা আছেন; তাদেরকে বিনীত অনুরোধ করছি। এই বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার জন্য। মনে রাখবেন এই ভাইরাস বাংলাদেশকে এত সহজে ছাড়বে না। আপনারা যদি ভেবে থাকেন অন্য কোনো দেশ কিছু একটি করবে আর আপনারা তখন এটি নিয়ে এসে আমাদের দেশে ব্যবহার করবেন তা করতে পারেন। এটিতো প্রায়ই করে আসছেন। কিন্তু এবার কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু অন্যরকম। যাদের কাছে থেকে আনবেন তারাও মহাবিপদে। সবাই আগে নিজেকে রক্ষা করবে; পরে আপনাকে।
সবশেষে বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জহিরুল আলম লিখেছেন, কিছুদিন আগে আমার এক ছাত্র নাজমুল ইসলাম শিপলু এটি নিয়ে লিখেছিল। জানি না কতজন পড়েছেন। তার কথাগুলো বিশ্বাস করেছেন। আমি বলতে চাই সরকারের যেহেতু টাকা আছে; দেশের মানুষের জন্য এমন একটি প্রজেক্টের প্রয়োজনীয়তা আছে। এখন সরকারের উচিত এক্ষেত্রে দ্রুত বিনিয়োগ করা। এটি করতে পারলে অসংখ্য বাংলাদেশির জীবন যেমন বাঁচবে তেমনি রক্ষা পাব সবাই।
বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জহিরুল আলম সিদ্দিকী ক্যানসার শনাক্তকরণের একটি সহজলভ্য পদ্ধতি আবিষ্কারের জনক। যার মাধ্যমে মাত্র ৯০ মিনিটে শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে যোগ দেন তিনি।
মোসাইদ রাহাত/এএম/পিআর