ত্রাণ দিলেন এমপি-ইউএনও, কেড়ে নিলেন যুবলীগ নেতা
সামাজিক দূরত্ব মেনে বসানো হয় নারী-পুরুষদের। প্রত্যেকের সামনে রাখা হয় চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্যাকেট। সন্ধ্যার একটু আগে উপস্থিত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবর্ণা রানী সাহা। সেখানে আগেই উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ।
এরপর ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্থান ত্যাগ করেন এমপি, ইউএনও এবং পৌর মেয়র। এরপর স্থানীয় যুবলীগের এক নেতার নেতৃত্বে তিনজন গরিব-অসহায় নারী-পুরুষের হাত থেকে ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর শহরের বলিদাপাড়ায়।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার দাবি, তালিকায় নাম না থাকায় তাদের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে নেয়া হয়েছে।
ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেন বলিদাপাড়ার যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন ও বাবরা গ্রামের লিটন আলী। যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন বলিদাপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম দফাদারের ছেলে। তিনি কালীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
এদিকে ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেয়ার খবর পেয়ে বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ইউএনও সুবর্ণা রানী সাহা দুজনের বাড়িতে ১০ কেজি করে চাল পৌঁছে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী সুফিয়া খাতুন জানান, তিনি কাজ করেন পরের বাড়িতে। বলিদাপাড়ায় পরের জমিতে খুপড়ি করে অসুস্থ স্বামী হায়দার আলীকে নিয়ে থাকেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। পরের বাড়ি কাজ করে যা পান তাই দিয়েই খরচ চালান। গত রোববার গিয়েছিলেন ত্রাণ নিতে। ত্রাণের প্যাকেট সামনে নিয়ে ছবি তোলার পর তা আবার কেড়ে নেয়া হয়। এরপর খালি হাতে ফিরে আসেন বাড়িতে।
কথা হয় ওই দিন ত্রাণ নিতে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, গত রোববার বিকেলে বলিদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণ দেয়ার জন্য ডাকা হয়। পৌরসভার গাড়িতে করে এসব ত্রাণ নিয়ে আসা হয়। এ সময় অসহায়দের ফাঁকা ফাঁকা হয়ে দাঁড়াতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার, ইউএনও সুবর্ণা রানী সাহা ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ত্রাণ বিতরণ করতে মাঠে আসেন। তারপর তাদের সামনে দেয়া হয় ত্রাণের প্যাকেট। ত্রাণ বিতরণ শেষে মাগরিবের আজান দেয়ায় এমপি ও পৌর মেয়র বিদ্যালয় মাঠ ত্যাগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও চলে যান। এরপর অসহায় তিনজনকে বলা হয় আপনাদের নাম তালিকায় নেই।
আরেক ভুক্তভোগী বাহাদুর মন্ডলের স্ত্রী সুন্দরী খাতুন বলেন, আমার স্বামীর বয়স প্রায় ৮০ বছর। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। একটা মাত্র ছেলে ভাঙারির ব্যবসা করে। অনেকদিন ধরে কাজে যেতে পারছে না। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। সেখান থেকে যা পাই সেটা দিয়েই চলি। ঘটনার দিন চাল দেয়ার পর আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়।
সুন্দরী খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন জাম্বু জানান, আমি ভাঙারির ব্যবসা করি। অনেক দিন তেমন কোনো ব্যবসা নেই। মা-বাবা, স্ত্রী সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। গত রোববার চাল দেবে শুনে তিনি বলিদাপাড়া মাঠে যান। চাল সামনেই ছিল। এরপর এমপি সাহেব নামাজ পড়তে গেল সমীর নামে একজন তালিকায় তোমার নাম নেই বলে চাল নিয়ে চলে যান।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সমীর হোসেন ত্রাণ নিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তাদের তালিকায় নাম না থাকায় ত্রাণ নিয়ে অন্যদের দেয়া হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রাণী সাহা বলেন, লোক মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর দুইজনের বাড়িতে চাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা যারা আছে তাদেরকে বলেছিলাম আগে যারা ত্রাণ পেয়েছে তাদের বাদ দিয়ে তালিকা করতে। কারণ এক ব্যক্তি যেন দুই বার না পায়। তারা সেভাবে তালিকা তৈরি করে নাম দেয়। কিন্তু ত্রাণ দেয়ার সময় ওখানে যারা আগে ত্রাণ পেয়েছিল তারা উপস্থিত হয়েছিল। ত্রাণ দেব ২০০ জনকে উপস্থিত হয়েছে ৩০০ জন। যারা আগে পেয়েছে তারাও এসেছে।
তিনি বলেন, হয়তোবা আমাদের ভলেন্টিয়াররা তাদেরকে তখন বলেছে তোমরা তো আগে ত্রাণ পেয়েছো, যারা পায়নি তাদেরকে দিয়ে দাও। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়টাকে কিছু মানুষ অন্যভাবে নেয়ার চেষ্টা করছে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/আরএআর/এমএস