পাবনায় হোসিয়ারি শিল্পে প্রতিদিন ক্ষতি দেড় কোটি টাকা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে পাবনায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির পাশপাশি আমদানি নির্ভর পণ্য এখন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পরিবহন সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে মালিকদের ক্ষতির পাশাপাশি কাজ না থাকায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং সম্ভাবনাময় হোসিয়ারি ও মিনি গার্মেন্টস শিল্প। মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে এই শিল্পে। করোনার প্রভাবে পাবনার এই শিল্পের প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ শিল্পের ধস নামে ২০ দিন আগে থেকেই। সে হিসেবে গত ২০ দিনে মিনি গার্মেন্টস ও হোসিয়ারি শিল্পের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাবনার হোসিয়ারি এবং তাঁত শিল্পের খ্যাতি জগতজোড়া। পাবনায় উৎপাদিত হোসিয়ারি ও তাঁত পণ্য সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপেও রফতানি করা হতো। কিন্তু ৫০ এর দশকে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে এই শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে। বেকার হয়ে পড়েন হাজার হাজার মালিক-শ্রমিক। কালের প্রবাহে গার্মেন্টস অব্যবহৃত কাপড় বা ঝুট দিয়ে টি-শার্টসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির মাধ্যমে পাবনার ওই বিলুপ্ত হোসিয়ারি শিল্প আবার জেগে ওঠে। মিনি গার্মেন্টস নাম দেয়া এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য ভারত এবং মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
এভাবেই নিরবে নিভৃতে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য গড়ে ওঠে পাবনায়। এর সঙ্গে এখন জড়িত এখানকার ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ। কিন্তু করোনার আতঙ্কে এর কেনাবেচা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার প্রভাবে গত ২০ দিন আগ থেকে এই শিল্পে ধস নেমে আসে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন পাবনায় উৎপাদিত ২০ গাড়ি পণ্য রফতানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত ২০ দিন আগে থেকে সামান্য কিছু পণ্য যাচ্ছিল। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ মাত্র এক গাড়ি পণ্য যায়। এরপর থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। বাইরে থেকে কোনো বায়ার যেমন আসছেন না, তেমনি আভ্যন্তরীণ বাজারেও এর বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এরই একপর্যায়ে ২৪ মার্চ থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে পাবনার এই মিনি গার্মেন্টস বা হোসিয়ারি মার্কেট পুরোপুরি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। এতে করে প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের। আর ২০ দিন ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা।
গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ওসাকার প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওয়াজেদ বিশ্বাস রিপু জানান, পাবনার এই হোসিয়ারি ও মিনি গার্মেন্টস শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের ৯০ ভাগ রফতানি করা হয় এবং এর প্রধান বাজার ভারত ও মালয়েশিয়া। কিন্তু করোনার কারণে ওই দুটি দেশে রফতানি সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত ও মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছে এখানকার মালিকদের অন্তত ৪০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এসব বায়ারদের কাছে বিক্রি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মাল সরবরাহ না করায় বা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ টাকাও আদায় হচ্ছে না।
পাবনা হোসিয়ারি মেনুফ্যাকচারার্স গ্রুপের সভাপতি বারিক হোসেন জনি জানান, এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া হোসিয়ারি শিল্পের যে উত্থান হয়েছিল তা হয়ত আবার ধসে যাবে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই অনিশ্চিয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
একে জামান/আরএআর/এমকেএইচ