সিলেট থেকে ঢাকায় করোনা রোগী, দিনভর আলোচনা-সমালোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৩:২৪ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০২০

সিলেটের একমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসককে বুধবার রাতে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিকেলে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টার থেকে তাকে ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্তের খবরে ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে। মাত্র একজন করোনা আক্রান্ত সরকারি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপককে কেন সিলেটে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হলো না, এমন প্রশ্ন উঠেছে বেশ জোরেসোরেই। রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলে তখন অবস্থা কী দাঁড়াবে, এমন প্রশ্নও তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন নবীন চিকিৎসক থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিকরা।

দিনভর এ নিয়ে চলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তরুণ চিকিৎসকদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সিলেটে করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, অপ্রতুল সরঞ্জাম ও লোকবলের অভাবের অভিযোগ তুলছেন তারা।

ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে রাত ৯টায় করোনা আক্রান্ত ওই চিকিৎসকের কর্মস্থল ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে এর ব্যাখ্যা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ওসমানী হাসপাতাল ও শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান দাবি করেন, ওই চিকিৎসকের পরিবারের আগ্রহেই তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। সরঞ্জাম ও লোকবলের অপ্রতুলতার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান ও উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সংবাদ সম্মেলনে জানান, কোভিড-১৯ আক্রান্ত সিলেটের সেই চিকিৎসককে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঢাকায় পাঠায়নি। তার চাহিদামতো ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর হতে না পেরে তিনি স্বেচ্ছায় ঢাকায় গেছেন। তবে ঢাকায় যাওয়ার আগে সিলেটে তার চিকিৎসার কোনো ঘাটতি ছিল না। তার শারীরিক অবস্থাও ছিল স্থিতিশীল। আইসিইউতে নেয়ার মতো তার শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতিও ঘটেনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত ৫ এপ্রিল ওই চিকিৎসকের করোনা পজেটিভ ধরার পর থেকে তিনি নিজের বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে তাকে আইসিইউতে নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই চিকিৎসক আইসিইউর পরিবর্তে কেবিনে থাকতে চান। কেবিনে তাকে অক্সিজেন লাগানোর পর তিনি আগের চেয়ে সুস্থবোধও করেন। সারারাত চিকিৎসক, অ্যানেস্থলজিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে সেবা দেয়ার জন্য হাসপাতালেই ছিলেন।

সকালে ওই চিকিৎসক তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটে ভর্তির অনুরোধ করেন। কোভিড-১৯ এর রোগী ওসমানীতে ভর্তি করা সম্ভব নয় জেনেও তিনি ও তার স্ত্রী (তিনিও চিকিৎসক) নানাভাবে চেষ্টা করেন। শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার আশ্বাস দেয়ার পরও ওই চিকিৎসক সেখানে চিকিৎসা নিতে রাজি হননি।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওই চিকিৎসককে ঢাকায় পাঠাতে তার স্ত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান। কিন্তু কোনো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কোম্পানি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পরিবহনে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের এক চিকিৎসক একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিলে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তার স্ত্রী।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান জানান, ওই চিকিৎসককে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। তিনি ওই হাসপাতালের পরিচালকের সাথেও কথা বলেছেন। আক্রান্ত চিকিৎসকের চিকিৎসার ব্যাপারে বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরীও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ওসমানীর পরিচালক।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ও আইসিইউ নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত শহীদ শামুসদ্দিন আহমদ হাসপাতালের দুটি আইসিইউ অত্যাধুনিক ও সচল। প্রয়োজনমতো রোগীদের সেবা দিতে এ দুটি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে বলা হচ্ছে সেগুলো নাকি সচল নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুছুর রহমান জানান, আক্রান্ত চিকিৎসক সিলেটের চিকিৎসার ওপর কেন আস্থা রাখতে পারেননি সেটা তার ব্যাপার। ওই চিকিৎসক ও তার স্ত্রী ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে আগেভাগেই মনস্থির করে রেখেছিলেন। যে কারণে হয়তো তাদের সিলেটে রাখা সম্ভব হয়নি। আর কেউ উন্নত চিকিৎসার আশায় কোথাও যেতে চাইলে তাকে বাধা দেয়াও সম্ভব নয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের প্রচেষ্টায় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার আরও ৯টি আইসিইউ বেড বসানোর কাজ শুরু হবে। কাজ সম্পন্ন হলে এই হাসপাতালে একসাথে ১১ জন রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখা যাবে। কয়েক দিনের মধ্যে আইসিইউ ইউনিট ২০ শয্যায় উন্নীত করা হবে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ শিশির চক্রবর্তী, কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আজিজুর রহমান রোমান, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাইনুল ইসলাম ডালিম, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুশান্ত মহাপাত্র, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. রুবেল, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ওসমানী হাসপাতাল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক।

ছামির মাহমুদ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।