হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে যেন শাস্তি ভোগ করছেন রোগীরা
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টইনে থাকা রোগীদের ওয়ার্ডে খাবার ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধেরও সংকট রয়েছে বলে অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন আপাতত জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিলের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে রোগীদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করা হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার শিবচরে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন একজন শিক্ষিকা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের এক নিকটাত্মীয়। গত ৭ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ওই দুই নারীর করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ বলে আইইডিসিআর থেকে মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জানানো হয়। শুক্রবার ভোরেই তাদের শিবচর থেকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
গত ৩ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৩৬ জনের নমুনা ঢাকাতে পাঠানো হয়। আগে পাঠানো ৭৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। যাদের ৩ জন করোনা পজিটিভ।
এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা তিনজনের শরীরে আবারো করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় একই পরিবারের চারজনকে শুক্রবার ভোরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত তিনজন ইতালিফেরত যুবকের স্ত্রী ও দুই সন্তান। এর আগে গত ৬ এপ্রিল ইতালি ফেরত ওই যুবকের শ্বশুর, শাশুড়ি ও এক বন্ধুকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তাদের শরীরেও দ্বিতীয় বার করোনা শনাক্ত হয়। বর্তমানে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৯ জনকে রাখা হয়েছে।
আইসোলেশনে থাকা রোগীরা জানান, কোনো রকম নামমাত্র খাবার ও ওষুধ দেয়া হয়। এ খাবার খেয়ে জীবন বাঁচানোই কষ্ট। হাসপাতাল থেকে দেয়া ওই খাবার খেয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাবে।
আইসোলেশনে ভর্তি এক রোগী বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে আছি। সর্বক্ষণ চিন্তা আর চিন্তা। ছোট দুটি সন্তান নিয়ে এখানে আছি। কেউ কোনো কথা শোনে না। মনে হয় আমরা বড় অপরাধী। যেন জেলখানার চেয়েও বেশি শাস্তি ভোগ করছি। কোনো ধরনের পানির ব্যবস্থা নেই। পানির ট্যাপে হাত ধোয়ার পানি নেই। টয়লেট মারাত্মক অপরিষ্কার। করোনায় আক্রান্ত হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন। এখানে তার কিছুই নেই।
তিনি বলেন, গত রোববার থেকে আমার মা ও বাবা দুইজনই আইসোলেশনে আছেন। আজ (শুক্রবার) ভোর থেকে দুই বাচ্চাসহ আমি আবার আইসোলেশনে। বাথরুম ও টয়লেটে এমনকি হাত ধোয়ার বেসিনে কোনো পানি নেই। বাধ্য হয়ে হাত না ধুয়েই খাবার খেতে হয়।
ইতালি প্রবাসী এক রোগী জানান, আমি এবং আমার স্ত্রী দুই মেয়ে নিয়ে প্রায় ১৮ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। স্বাস্থ্য বিভাগের ছাড়পত্র নিয়েই বাড়ি আসি। কিন্ত এখন আবার নানাবিধ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছে। কখন কী রেজাল্ট আসছে আমরা তো জানিনা। আজ শুক্রবার সকালে আমাকে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে এনেছে। আর ভোরে একটি গাড়িতে করে আমার স্ত্রী ও ২ সন্তানকে আবার মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে স্পেশাল কোনো বরাদ্দ নেই। খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার যা খাবার দেয় তার বাহিরে দেয়ার কোনো সামর্থ নেই। এ ব্যাপারে রোগীদের ছাড় দিতে হবে। প্রয়োজনে বাহির থেকে খাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টেইনে থাকা রোগীদের মানসম্মত ও প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া পানির ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হবে। অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আপাতত জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিলের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ব্যয় করা হচ্ছে।
রোগীদের মানসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক খোঁজ খবর রাখার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) (উপসচিব) মো. আজহারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয় হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদের সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপাতত জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিলের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ব্যয় করার জন্য বলা হয়েছে। রোগীদের সুষম খাদ্য সরবাহের জন্য প্রয়োজনে তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা দেবেন বলেও জানান তিনি।
একেএম নাসিরুল হক/এফএ/পিআর