সুস্থ অ্যাম্বুলেন্স চালকের নমুনায় করোনা পজিটিভ, এলাকায় আতঙ্ক
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর পুরো উপজেলা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে বলে জানান শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. একেএম আনওয়ারুর রউফ।
এর আগে বুধবার (৮ এপ্রিল) সকালে ওই অ্যাম্বুলেন্স চালকের শরীর থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা সংগ্রহের পর হোম কোয়ারেন্টাইনে না রেখে তাকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্য রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে ওই অ্যাম্বুলেন্স চালক তার স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করেন। তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় তার সংর্স্পশে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ওই অ্যাম্বুলেন্স চালককে নমুনা সংগ্রহের পর হোম কোয়ারেন্টাইনে না রেখে কাজে নিয়োগ করায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, অবশ্যই বিষয়টি আতঙ্কের। চালকের নুমনা সংগ্রহের পরও তাকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানো ঠিক হয়নি। এতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন।
উপজেলা আইসিটি টেকনিশিয়ান মানিককুড়া গ্রামের বাসিন্দা জামান আহমেদ বলেন, গত বুধবার দুপুরে ওই অ্যাম্বুলেন্স চালক ও চিকিৎসক আমাদের গ্রামে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক রোগীর করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে আসেন। ওই চালকের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল জানান, তিনি ওই অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার চাপাঝোড়া গ্রামে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া শিশুর পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করতে যান। এ ঘটনায় তিনি ও তার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন নমুনা পাঠানো বাধ্যতামূলক। বুধবার রোগী না পাওয়ায় আমাদের নিজেদের মধ্যে থেকে ওইদিন সুস্থ থাকার পরও অ্যাম্বুলেন্স চালকের নমুনা পাঠাই। কিন্তু তার দেহে কাকতালিয়ভাবে করোনা ‘পজিটিভ’ রিপোর্ট আসে। অথচ তার দেহে করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। তাই তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এটা ভুল রিপোর্টও হতে পারে। এ ঘটনায় আমি নিজেও আতঙ্কিত। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমাকে জেলা শহর থেকে একবার নিয়ে আসে আবার দিয়ে আসেন অ্যাম্বুলেন্স চালক। আমি বুধবার ও বৃহস্পতিবার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তার পাশের সিটে বসে যাতায়াত করেছি। উপসর্গ থাকলে আমি অবশ্যই তার সঙ্গে যাতায়াত করতাম না। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্স চালক সুস্থ আছেন এবং তার কোয়ার্টারেই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। শনিবার তার নমুনা পুনরায় এবং আমাদের সকলের নমুনা পাঠানো হবে। পরর্বতীতে রির্পোট দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. একেএম আনওয়ারুর রউফ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তির দেহ থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাহলে রির্পোট আসা পর্যন্ত তাকে অবশ্যই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা আমাদের। এ নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নিব।
আরএআর/এমএস