ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লকডাউন মানছে না মানুষ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হওয়া এই লকডাউনের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিষিদ্ধ। কিন্তু এই লকডাউন মানছে না সাধারণ মানুষ। লকডাউন ভেঙে রাস্তায় বের হওয়ায় বাড়ছে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করা হলেও সাধারণ মানুষ সেটি আমলে নিচ্ছে না। অনেকেই জরুরি প্রয়োজ ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন।
রোববার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিন জেলা শহরের টি.এ রোড, মঠেরগোড়া, কুমারশীল মোড় ও সদর হাসপাতাল সড়কে সাধারণ মানুষের অবাধ চলাচল করতে দেখা গেছে। অন্যসব দিনের মতোই ওই সড়কগুলো দিয়ে রিকশা ও মোটরসাইকেল এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকলেও জনসাধারণের চলাচল বন্ধে খুব একটা তৎপরতা নেই তাদের। যদিও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে শহরজুড়ে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি দেখলেই সরে পড়ছেন মানুষজন।
গতকাল শনিবার পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সাতজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে দুজন, আখাউড়ায় তিনজন, নবীনগরে একজন ও বাঞ্ছারামপুরে দুজন। তাদের মধ্যে নবীনগরের আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকার কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা গেছেন।
জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এতো মানুষের মৃত্যুতেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। আসলেই মানুষের মধ্যে সচেতনার অভাব রয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করছেন। তবুও জনগণ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) আবু সাঈদ বলেন, জনসাধারণকে বুঝতে হবে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন মানুষকে ঘরে রাখার জন্য। নিজেদের সুরক্ষার জন্য সবাইকে নিজ থেকেই ঘরে চলে যাওয়া উচিত।
এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির বৈঠক থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসন হায়াত উ-দৌলা খান। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়ক এবং নৌপথে অন্য কোনো জেলা থেকে কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবেশ অথবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে অন্য জেলায় গমন করতে পারবেন না বলে জানান জেলা প্রশাসক। তবে জরুরি পরিষেবা লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে।
আজিজুল সঞ্চয়/এএম/এমকেএইচ