বিভিন্ন জেলা থেকে এখনও দলে দলে কুড়িগ্রামে ফিরছে মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২০

কুড়িগ্রামে থামছে না ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঘরমুখো মানুষের স্রোত। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজিপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক, মাইক্রোবাস, নৌকা দিয়ে ফিরছে হাজার হাজার মানুষ।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী গত ৩১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দেশের ১৫টি জেলা থেকে প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ কুড়িগ্রামে ফিরেছে।

এদের মধ্যে ঢাকা থেকে ফিরেছে ৪ হাজার ৮১০ জন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ৩ হাজার ৬১৮ জন, সাভার থেকে ৪ হাজার ৮শ জন, চট্টগ্রাম থেকে ৪ হাজার ৭শ জন।

এছাড়া টাঙ্গাইল থেকে ৩ হাজার ১৩৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৪ হাজার ৯শ জন, গাইবান্ধা থেকে ৪শ জনসহ মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, গাজীপুর থেকেও ফিরেছে উল্লেখযোগ্য মানুষ।

এসব মানুষ জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে ফিরেছে। এদের মধ্যে প্রায় মানুষ বিভিন্নভাবে এ জেলায় ফিরেছে বলে জানা গেছে। নৌকা, ট্রাক, পিকআপ, বাস, মাইক্রোবাসসহ পায়ে হেঁটে অনেকে ফিরেছে বলে জানা গেছে। এদের বেশিরভাগ চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় বসবাস করায় প্রশাসনের নজরে আসে না। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে ফেরতদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ তালিকায় ৫ হাজার ৮৭৭ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের রেড জোন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসব লোক এসে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় নিজ নিজ এলাকায়। তারা হোম কোয়ারেন্টাইনও মানছেন না। দেদারছে তারা হাট-বাজারসহ জনসমাগমে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। এতে আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। জেলায় এ পর্যন্ত দুইজনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ দুজনই ঢাকা ফেরত হওয়ায় আরও বেশি করে স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে।

বেশ কজন স্থানীয় লোকজন জানান, করোনা সংক্রমণের রেড জোন থেকে আসা এসব মানুষ, হোম কোয়ারেন্টাইনের নামে বাড়ির সব সদস্যদের সাথে মেলামেশা করে। আবার ওইসব সদস্য দিব্যি হাটবাজারে যাচ্ছেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে কুড়িগ্রামে।

ঢাকার কেরাণীগঞ্জের ইটখোলা থেকে ফেরত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওখানকার লোকজন তাদের হাটবাজারে বা গ্রামে ঢুকতে দেয় না। তিনদিন না খেয়ে বেশি টাকা ভাড়ায় ট্রাকে ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে শূন্য হাতে ফিরেছেন।

গতকাল রোববার সকালে (১৯ এপ্রিল) নারাণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে দুটি ট্রাক এ মাইক্রোবাসে অর্ধ শতাধিক পোশাক শ্রমিক কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ফেরে। এসময় ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ ট্রাক এবং মাইক্রোবাসসহ তাদের আটক করে। এদের মাঝে নারী ও শিশুসহ ৬৫ জনকে হোমকোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হলেও বাকিরা আগেই সটকে পড়ে।

ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমান জানান, দুটি ট্রাক ও দুটি প্রাইভেটকারে লোকজন এসেছে। ৬৫ জনের মতো তালিকা করা হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, সারাদেশের কড়াকড়ি থাকলেও কিভাবে এসব লোকজন আসছে বুঝা যাচ্ছে না। ওইসব এলাকার প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির মালিকগণ তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

এর আগে ১৪ এপ্রিল ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ফেরত ৬২ জন শ্রমজীবি মানুষকে কচাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। এছাড়া গত ১২ এপ্রিলে কচাকাটা, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি ও ভূরুঙ্গামারী থানায় ৭টি বাসযোগে ফরিদপুর থেকে এসেছে দুই শতাধিক জুটমিল শ্রমিক। তাদেরকে রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে।

গেল কয়েকদিনে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শুধুমাত্র নদীপথে কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া এই পাঁচটি ইউনিয়নে ফিরেছে প্রায় দুই হাজারের অধিক মানুষ।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু বলেন, দেশের অন্যসব জেলার তুলনায় কুড়িগ্রাম জেলার চিত্রটা ভিন্ন। এখানে নদ-নদীসহ চরাঞ্চলের সংখ্যাও বেশি। ফলে সারা বছর জেলায় কাজ না থাকায় এখানকার শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। বর্তমানে তারা ফেরত আসায় জেলায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। জেলার জনসংখ্যা অনুযায়ী করোনা সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহে যেমনটি কচ্ছপ গতি তেমনি এর ফলাফল পেতেও কয়েকদিন সময় লাগছে। এছাড়াও পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যের সাথে গরমিল পাওয়া যায়।

সরকারের বিধি নিষেধ জেলার সাধারণ মানুষ না মানার কারণে জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার ঘটার আশঙ্কা করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে জেলায় ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে। এসময় তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে।

নাজমুল/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।