বিবেকের তাড়নায় ঘরে থাকতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:২৩ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২০

‘বিবেক বার বার তাড়া করছিল। করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে না পারলে অনেক মানুষ মারা যাবে। কী করব ঠিক বুঝে ওঠতে পারছিলাম না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম। মানুষের জীবন বাঁচাতে সারা জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমাকে কিছু একটা করতে হবে। তাই আর ঘরে থাকতে পারিনি।’

কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান (৬৫)।

বুধবার (২২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার ৮নং লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বিধবা নারীদের ভাতা দেয়ার কাজ চলছিল। লাইনে দাঁড়িয়ে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন ভাতার টাকা নিতে আসা বেশ কয়েকজন নারী। তারা নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলছিলেন না। অকস্মিক সেখানে মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরা এক ব্যক্তি ডান হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের একটি বোতল নিয়ে হাজির হলেন। এগিয়ে গেলেন লাইন দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের কাছে। তিনি নির্দেশনা দিয়ে সকলকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন। কীভাবে প্রাণঘাতী করোনাভাই থেকে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখা যায় তা বোঝালেন। পরিশেষে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে সকলকে হাত পরিষ্কার করালেন।

গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে তিন বছর হলো চাকরি থেকে অবসরে এসেছি। চাকরি জীবনে মাঠ পর্যায়ে ম্যালেরিয়া ও গুঁটি বসন্তের মতো মহামারি মোকাবেলায় মাঠে কাজ করেছি। দেশ থেকে পোলিও মুক্ত করার জন্য নিরালসভাবে ভূমিকা রেখেছি। কখনও ভয় করিনি। পিছপা হয়নি। কিন্তু করোনার ভয়বহ পরিস্থিতি দেখে আমি রীতিমত শঙ্কিত হয়েছি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস কত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে একজন সাবেক স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে তা আমার বুঝতে কষ্ট হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান জানান, এসবের বাইরে করোনা যাতে মহামারি আকারে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়াতে না পারে সেজন্য তিনি পশ্চিম গোপালগঞ্জের জালালাবাদ, শুকতাইল, চন্দ্রদীঘলিয়া, পাইকান্দিসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন। ওইসব এলাকার মানুষকে করোনার ভয়বহতা সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

এছাড়া বাইরের জেলা থেকে গোপালগঞ্জে অনুপ্রবেশকারীদের অনুসন্ধান ও তাদের সম্পর্কে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের যাবতীয় তথ্য প্রদানের কাজ করেন। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী- এ পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মাদারীপুর থেকে গোপালগঞ্জে আসা ২১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে এসব কাজ করছেন।

আশরাফ আলী খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার পরও তার নির্দেশনায় এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় ও মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রতিনিয়ত যেসব নির্দেশনা দিচ্ছেন তা আমরা ঠিকমতো মেনে চলছি না। এতে আমরা নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। এর খেসারত আমাদেরকে জীবন দিয়ে দিতে হতে পারে। এ মহামারি থেকে বাঁচতে হলে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

এস এম হুমায়ূন কবীর/আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।