চার সহকর্মী দায়িত্ব ছাড়লেও হাল ছাড়েননি এই যোদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ১০:০১ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২০

বরিশাল বিভাগের একমাত্র করোনা পরীক্ষাগার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয় পরীক্ষা কার্যক্রম। নমুনা নেয়ার জন্য হাসপাতালের পাঁচ টেকনোলজিস্টের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। ওই পাঁচজনের মধ্যে চারজন বিভিন্ন অজুহাতে তালিকা থেকে নাম বাদ দিলেও সাহস নিয়ে এই কাজে যুক্ত হন বিভূতি ভূষণ হালদার।

তিনি একাই এখন সংগ্রহ করছেন নমুনা। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ২৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন তিনি। করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তি, করোনার উপসর্গ বা সন্দেহ করা হয় এমন রোগীর থেকে প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ করছেন প্রথম সারির যোদ্ধা টেকনোলজিস্ট বিভূতি ভূষণ হালদার।

ঝুঁকি জেনেও ভয়কে জয় করে নমুনা সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ঝঁকিপূর্ণ কাজ করেন বলে ২৯ মার্চের পর আর বাড়িতে যাচ্ছেন না বিভূতি ভূষণ। পরিবারের কাছ থেকে আলাদা আছেন তিনি। বিভূতি থাকছেন নগরীর আবাসিক হোটেল স্যাডেনা ইন্টারন্যাশনালের একটি কক্ষে।

বরিশাল মেডিকেল এবং স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিভূতি ভূষণকে ‘করোনা যুদ্ধের নায়ক’ হিসেবে অবহিত করেছেন। সেই করোনা যোদ্ধাকে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ নগদ পাঁচ হাজার টাকা, দুই সেট গ্লাভস, দুটি মাস্ক ও একটি পিপিই এবং দুই ঝুড়ি ফল উপহার দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।

barishal-police-commissioner-1

রোববার বিকেল পৌনে ৪টায় পুলিশ কমিশনারের পক্ষে সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল হালিম নগরীর সদর রোডে বিভূতির অস্থায়ী সরকারি বাসস্থান হোটেল স্যাডেনায় এ উপহার পৌঁছে দেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এই সময়ে তিনি যা করছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি ভালো কাজ করছেন। তিনি প্রথম সারির একজন যোদ্ধা। তাকে উৎসাহিত করতে সামান্য উপহার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট বিভূতি ভূষণ হালদার বলেন, নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তি, করোনার উপসর্গ বা সন্দেহ করা হয় এমন রোগীর খুব কাছে যেতে হয়। সে কারণে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রথমে হাসপাতাল থেকে পাঁচজনকে রোস্টার করে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। নমুনা সংগ্রহের কথা শুনে সহকর্মীদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। অনেকে অজুহাত দেখিয়ে দায়িত্ব এড়ালেন। অনেকে তদবির করে রোস্টার থেকে নাম কাটিয়ে নিলেন। বুঝলাম, শেষ পর্যন্ত কাজটা আমাকে একাই করতে হবে।

বিভূতি ভূষণ হালদার বলেন, যেকোনো পুরস্কার আনন্দের। পুলিশ কমিশনারের পাঠানো পুরস্কার আমাকে উৎসাহিত করবে। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে করোনার বিস্তার রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

বিভূতি ভূষণ হালদার নয় বছর আগে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট পদে যোগ দেন। তিনি সদর উপজেলার চরকাউয়া এলাকার বাসিন্দা সুধাংশু হালদারের ছেলে। তার বাবা সুধাংশু হালদার মেডিকেলের সহকারী কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ছয় বছর আগে অবসর নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ২৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বিভূতি ভূষণ। এর মধ্যে ১৫জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ।

সাইফ আমীন/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।