সুনামগঞ্জে করোনা জয়ী যুবকের গল্প ও পরামর্শ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:১৮ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসে যেখানে মৃত্যুর মিছিল সেখানে এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার গল্পটাও হয় অন্যরকম। ঠিক তেমনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় আসেন ঢাকার পপুলার ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করা যুবক সজিবুর রহমান।

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ও তা থেকে সুস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন তিনি।

শুরুতে তিনি সকল চিকিৎসক ও নার্সদের স্যালুট দিয়ে বলেছেন, উনাদের কাছে আমি ঋণী ও চিরকৃতজ্ঞ। তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সেবা করে যাচ্ছেন।

তিনি তার গল্পের শুরু করে বলেন, আমার শরীরে করোনার কোনো ধরনের উপসর্গ ছিল না। ঢাকা থেকে আমাকে একটি টেস্ট করানো হয়েছিল। কিন্তু টেস্টে আমার কোনো মতামত ছিল না এবং আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে টেস্টটি করানো হয়েছিল। পরে আমি ওই দিনই গ্রামের বাড়ি (বিশ্বম্ভরপুর) চলে আসি করোনার প্রতিরোধ নিয়ম মেনে মুখে মাক্স, দুই হাতে হ্যান্ডগ্লাভস পড়ে। সাথে ছিল হ্যান্ডসেনিটাইজার। ভয় ছিল, যদি আমার পজিটিভ হয়ে যাই এ নিয়ে? তাই সতর্কতা অবলম্বন করি। আমার দ্বারা যেন অন্য কারও ক্ষতি না হয় সেইভাবে আমি বাড়িতে পৌঁছেছি।

তিনি আরও লিখেন, যেহেতু আমি ঢাকা ফেরত তাই থানা এবং চেয়ারম্যানকে অবগত করে আমি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ নিয়ম মেনে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবো। আলাদা একটি বাড়িতে আবস্থান করি। আমি কারও সাথে মিশিনি। দূর থেকে ওয়ান টাইম বক্সে খাবার সংগ্রহ করে খেয়েছি। দুইদিন এবং দুইরাত অবস্থান করি ওই আলাদা একটি নতুন বাড়িতে। তারপর ১৫ এপ্রিল রাতে আমাকে সুনামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এখানে আসার পর আমি জানতে পারি আমার কোভিড-১৯ পজিটিভ। ঢাকার রিপোর্ট অনুযায়ী। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমার ভেতর সবসময় কাজ করতো আমি এখনও নেগেটিভ আছি। এটাই ছিল আমার বড় শক্তি এবং মহান আল্লাহর ওপর আমার দীর্ঘ বিশ্বাস ছিল আমার কিছু হবে না।

যাই হোক আল্লাহ ওপর বিশ্বাস রেখে হাসপাতালে আমি থাকতে শুরু করলাম। ভর্তির ৭ দিন পর আমার একটি টেস্টের নমুনা দেয়। সেই রিপোর্টে কোভিড-১৯ নেগেটিভ আসে। কয়েকদিন পর আরেকটা নমুনা নেয়া হয় সেটিও নেগেটিভ আসে। তারপর আমাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয় এবং বলে তুমি কোভিড-১৯ মুক্ত। তখন খুশিতে আমার মনটা ভরে যায়। আর বলতে থাকি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে কল করে জানিয়ে দিলাম আমার খুশির খবরটা।

তিনি সকলকে করোনাভাইরাস হলে ঘাবরে না গিয়ে ও ভয় না পেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে ঘাবরে যাবেন না। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু ১৪ দিন নিয়ম মেনে চলুন। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে হবে। দেখবেন ১৪ দিন পর আপনার কোভিড-১৯ নেগেটিভ চলে আসবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে আমি ১২ দিন ছিলাম চিকিৎসার জন্য। এই ১২ দিন আমি প্রতিদিন আমি ৩/৪ বার গরম পানি পান করতাম। গরম পানির সাথে লেবুর রস এবং পরিমান মতো লবণ দিয়ে গরগরা কুলি করতাম এবং গরম পানি পান করতাম এবং ডাক্তার স্যার এবং নার্স আপুদের নিয়ম ও পরামর্শ অনুযায়ী থেকেছি। প্রতিদিন হাসপাতালে নিয়ম ও মেনু অনুযায়ী সকাল, দুপুর ও রাতে খাবার দিয়েছে। প্রতিদিন এক বার রং চা পান করতাম সাথে ছিল আদা, এলাচ, দারুচিনি। ভিটামিন-সি ট্যাবলেট দিনে ২ বার খেয়েছি সকাল এবং রাতে। প্রতিদিন একটা করে মাল্টা খেয়েছি ও প্রতিদিন ১.৫ লিটার গরম পানি এবং ২ লিটার নরমাল পানি পান করেছি।

উল্লেখ্য, সোমবার সকালে ২৫০ শয্যা সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে সুনামগঞ্জের দুইজনকে সুস্থ ঘোষণা করে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। তাদের নমুনা রিপোর্ট পরপর দুইবার নেগেটিভ আসলে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে সুনামগঞ্জে আরও ১৪ জন করোনায় আক্রান্ত রয়েছেন। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, শাল্লা উপজেলায় ৩ জন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২ জন, ছাতক উপজেলায় ২ জন এবং দিরাই উপজেলায় ১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

মোসাইদ রাহাত/এমএএস/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।