ফুটপাতেও মিলছে পিপিই, দাম ৪শ থেকে শুরু
বগুড়ায় ফুটপাতেই পাওয়া যাচ্ছে নিম্নমানের পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই)। এগুলোর দাম চার’শ থেকে শুরু করে আট’শ টাকার মধ্যে। যা কিনে সাধারণ মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্রভাবে যেমন পিপিই উৎপাদন করা হচ্ছে, তেমনি ফুটপাতে, রাস্তার ধারে পসরা সাজিয়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে। নিম্নমানের এসব পিপিই মানুষের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পিপিই কেবলমাত্র মনের সান্ত্বনা ছাড়া কিছুই না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাহলে, প্রশ্ন থেকেই গেল স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এক শ্রেণির ব্যবসায়ী মৌসুমি ব্যবসা মনে করে যেনতেন ভাবে পিপিই তৈরি ও বিপনণের ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
বগুড়ার দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান পিপিই তৈরির কাজে জড়িয়ে পরে। তারা টিস্যু কাপড়, পলিস্টার কাপড় দিয়ে যেনতেন ভাবে পিপিই তৈরি করছে। এমনকী মানহীন কাপড় সেলাই করে পিপিই বানিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন একশ্রেণির দর্জিরাও।
অননুমোদিত পিপিইগুলো বিজ্ঞাপন দিয়েও বিক্রি করা হচ্ছে। চার’শ থেকে আট’শ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে সেলাই করা এসব পিপিই। লাল, সাদা, সবুজ থেকে শুরু করে হরেক রংঙের এবং রকমের পিপিই তৈরি করছে এসব প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বগুড়ার অভিজাত সার্জিক্যাল সামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনুমোদনবিহীন পিপিই বিক্রি হচ্ছে। শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কের পাশে একটি সার্জিক্যাল সামগ্রী দোকানে গেলে তারা পিপিই দেখিয়ে আট’শ টাকা দাম চান। এই স্টোরের কাছেই ফুটপাতে পিপিই বিক্রি হচ্ছে চার’শ থেকে সাড়ে চার’শ টাকায়।
বগুড়া শহরের বেজোড়া এলাকার পল্লী প্রাণি চিকিৎসক জামাল হোসেন বৃহস্পতিবার পিপিই কিনতে গিয়ে দাম দর করে আর কিনেননি। তিনি জানান, দামে না মেলায় তিনি কিনতে পারলেন না। বগুড়ার বাজারে যত পিপিই বিক্রি হচ্ছে সবগুলো সুইং মেশিনে সেলাই করা। কোনো কোনো পিপিই পেস্টিং করা হয়। পিপিইগুলো ওয়ান টাইম হলেও বলা হচ্ছে ওয়াশ করেও ব্যবহার করা যাবে।
যদিও এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ ছাড়াই নিম্নমানের পিপিই আমদানি পূর্বক বিক্রয় ও বিতরণ করছে। নিম্নমানের পিপিই চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ ও ঝুঁকিপূর্ণ।এ ধরনের কার্যকলাপ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিজ্ঞপ্তির জারির পরও বগুড়াসহ বিভিন্নস্থানে নিম্নমানের পিপিই উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত রয়েছে।
গায়ে পিপিই জড়িয়ে বগুড়ার মহাস্থান থেকে শহরের ফতেহ আলী বাজারে এসেছেন চাকরিজীবী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, বাজারে এলে অনেক মানুষের সঙ্গে মেলামেশা হয়। করোনা যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, সেজন্য ভয়টাও বেশি। এ কারণে সস্তায় একটা পিপিই কিনে গায়ে জড়িয়ে বাজার করতে এসেছি।
করোনা শুরুর পরই থেকেই শহরের সাতমাথায় ফুটপাতে পিপিই বিক্রি করছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আসলে এগুলো পরিপূর্ণ পিপিই না। সাধারণ গার্মেন্টসে বানানো। তবে মানুষ যেহেতু কিনছেন, তাই দুটো পয়সা লাভের আসায় আমরা বিক্রি করছি।
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ গউসুল আজিম চৌধুরী জানান, বিষয়টি এখনও তাদের জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি তারা দেখবেন।
বগুড়ার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মাদ আহসান হাবীব জানান, ইতোপূর্বে তারা অনুমোদন নেই এমন পিপিই বিক্রি না করতে বলেছেন। এরপরও যদি কেউ বিক্রি করে তবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, যে পিপিই বিক্রি হচ্ছে সেগুলো ভাইরাস প্রটেকটিভ নয়। এগুলো সুরক্ষা দিতে পারবে না। তাই এসব পিপিই বিক্রি করা যাবে না।
এমএএস/এমকেএইচ