কক্সবাজারে শতকের ঘর পার করল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে করোনা। গত ৪০ দিনেই শতকের ঘর অতিক্রম করেছে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। সোমবার একদিনে মিলিছে ১৩ পজিটিভ রিপোর্ট। রোববার মিলেছিল ১০ জন।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার ৪১ দিনে সোমবার (১১ মে) বিকেল পর্যন্ত নমুনা টেস্ট হয়েছে ২ হাজার ৮১৫ জনের। এর মাঝে ১১১ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। ইতোমধ্যে নির্ধারিত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ১৬ জন বাড়ি ফিরেছেন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিকাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাহান নাজির এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. শাহজাহান নাজিরের মতে, কক্সবাজারে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর ২৩ জন কক্সবাজার সদর উপজেলার, রামু উপজেলার ৪ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৩১ জন (প্রথম ঢাকায় শনাক্ত হওয়া রোগীসহ), মহেশখালীতে ১২ জন, উখিয়ায় ৯ জন, টেকনাফে ৮ জন, পেকুয়ায় ১৪ জন এবং সর্বশেষ কুতুবদিয়ায় ১ জন। অপর ১০ জনের ৯ জন বান্দরবান জেলার এবং আরেকজন চট্টগ্রামের লোহাগড়ার।
ল্যাবের রিপোর্ট মতে, সোমবারসহ গত এক সপ্তাহে দ্রুত গতিতে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৫ মে থেকে ১১ মে এ সাতদিনে ৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রথম ৩৪ দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৬ জনে। ৫ মে একদিনেই মিলেছে ১১ জনের পজিটিভ রিপোর্ট। ৬ মে তা কমে হয় ২ জনে। কিন্তু আতংক বাড়িয়ে ৭ মে তা একবারে হয় ১৯। অবশ্য ৮ মে ৪ জন আর ৯ মে মিলেছে ৬ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। কিন্তু ১০ মে আবারও ১০ জনের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। আর ১১ মে (সোমবার) ১৮৭ জনের পরীক্ষায় একদিনেই ১৩ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, রোববার কক্সবাজারের ৮টি উপজেলা, ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে ১৮৭ জন সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সোমবার সকাল থেকে শুরু করা পরীক্ষায় এদের মধ্যে ১৩ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। অপর ১৭৪ জন করোনা নেগেটিভ।
এ হিসাবে কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত ঢাকার প্রথম শনাক্ত নারীসহ ১০২ জন। আর কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবে পরীক্ষা হিসেবে বান্দরবানের ৯ ও লোহাগাড়ার একজনসহ ১১১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে করোনা আক্রান্তদের তথ্যমতে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছরা, তারাবনিয়ার ছরা, বৈদ্যঘোনা ও টেকপাড়ায় করোনার অস্তিত্ব মিলছে বেশি। প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তার সংস্পর্শে আসা অন্যদের সঠিকভাবে স্ক্যানিং না করায় এসব এলাকায় করোনার উপস্থিতি বেড়েছে বলে মনে করছেন মেডিকেল সংশ্লিষ্টরা।
আবার শুরু থেকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় গত ৪০ দিন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় করোনা শনাক্ত হয়নি। বাইরে থেকে যারাই দ্বীপে ঢুকেছে তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের পর পরিবার বা এলাকায় মিশতে দেয়ায় এতদিন করোনা ছোবল বসাতে পারেনি সেখানে। কিন্তু ৪১ দিনের মাথায় অবশেষে কুতুবদিয়ার একজন রোগী শনাক্ত হওয়ায় এখন উদ্বেগ বাড়ছে।
কুতুবদিয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীরের মতে কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দা হলেও আক্রান্ত ব্যক্তি কক্সবাজারে অবস্থান করেন। ওই ব্যক্তি কুতুবদিয়ার হলেও রোগী কুতুবদিয়ার নয় বলে দাবি তার।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা না জাগায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও আমাদের মৃত্যুর হার নেই বললে চলে। সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরাও সুস্থ হওয়ার পথে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এটি আশা জাগানিয়া। তবুও সবার মাঝে সচেতনতাই কেবল করোনার প্রাদুর্ভাব কমাতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস