বেড়িবাঁধের অভাবে আতঙ্কে ঝালকাঠির দুই লাখ মানুষ
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ঝালকাঠিতে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর থেকে ভারী ও বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। ঝালকাঠিসহ মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঝালকাঠির ৪ উপজেলার ৫ হাজার ৮৬৩ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশয় নিয়েছেন।
জেলার সুগন্ধা, বিষখালী ও গাবখান নদীর মোহনা (গাবখান ব্রিজ সংলগ্ন) থেকে দক্ষিণে বয়ে গেছে বিষখালী নদী। আম্ফানের আতঙ্কে ঝালকাঠি সদর ও কাঁঠালিয়া এলাকার ২৯ কিলোমিটার বিস্তৃত বিষখালী নদী তীরবর্তী মানুষ এখন চরম আতঙ্কে। এ দুই উপজেলায় নদীর তীরে বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে ২ লক্ষাধিক মানূষ।
ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও বুলবুলে জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা কাঁঠালিয়া। বেড়িবাঁধ না থাকায় চার ইউনিয়নের জনগণের দুর্ভোগের শেষ নেই। বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের ক্ষোভেরও অন্ত নেই। বাঁধের অভাবে প্রতিবছরই জলোচ্ছ্বাসে ফসল ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নদী তীরবর্তী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেড়িবাঁধ না থাকায় সিডরে কাঠালিয়া উপজেলায় ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ঘূর্ণিঝড় আইলা ও বুলবুল আঘাত হানে কাঁঠালিয়ায়। কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বিষখালী নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভেসে গেছে জেলেদের জাল ও নৌকা। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ছোট-বড় পুকুর। নষ্ট হয়ে গেছে কাঁচা আধা কাঁচা ঘর-বাড়ি ও ফসলের ক্ষেত। এছাড়াও স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আমুয়া, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, চিংড়াখালী, জয়খালী, কাঁঠালিয়া সদরসহ প্রায় ২০টি গ্রামের ফসলি মাঠ প্লাবিত হচ্ছে।
অপরদিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন, রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নও বিষখালী নদীর তীরে। এসব এলাকায় কিছু অংশে বেড়িবাঁধ থাকলেও তা সংস্কারের অভাবে ধসে পড়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের পানিও ফসলি জমিতে প্রবেশ করে। এছাড়া বেশিরভাগ অংশেই বেড়িবাঁধ না থাকায় লোকজন চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বেড়ি বাঁধ না হওয়ায় আমরা বন্যার সময় খুবই অসহায় অবস্থায় পড়ি। ঘর-বাড়ি আর কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বাঁধ না থাকায় প্রতিদিন স্বাভাবিক জোয়ারে বিষখালী নদীর পানি সহজেই প্রবেশ করে তলিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. এমাদুল হক মনির বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এ বেড়ি বাঁধ নির্মাণ। বাঁধটি নির্মাণ করে উপজেলার জনসাধারণকে নিরাপদে রাখা সরকারের দায়িত্ব। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, ঝালকাঠির বিষখালী নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই। সরেজমিনে পরিদর্শন করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বেড়িবাঁধ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও বরাদ্দ এলেই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।
আতিকুর রহমান/এফএ/জেআইএম