আম্ফান কেড়েছে তাদের ঈদের আনন্দ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ২৪ মে ২০২০

ঝালকাঠি আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল জামে মসজিদে ৩০ বছর ধরে খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মো. শামসুল হক। এতদিন পরিবার নিয়ে তার জীবন ভালোই কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ তাতে হানা দেয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। ছন্দপতন ঘটে তার জীবনে।

সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠি এলাকার এই বাসিন্দা জানান, মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি বাড়ির পাশে জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ রোপন করেছিলেন। এছাড়া পুকুরেও বিভিন্ন মাছও ছিল। সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রবল বাতাসে তার বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের ওপর একটি বড় গাছ হেলে পড়েছে। রোপণ করা কলা, লেবু, আমড়া, ছফেদাসহ বিভিন্ন ফলের গাছ ভেঙে গেছে। পানির তোড়ে পাড় ভেঙে পুকুরের মাছও গেছে ভেসে।

এমন দিশেহারা শুধু মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল হক একাই নন। আরও অনেকেই আছেন।

ঝালকাঠির দুর্গম এলাকা কাঁঠালিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট। বিষখালী নদী তীরের অরক্ষিত বেড়িবাঁধের পাশেই অবস্থিত লঞ্চঘাটের পল্টুন। সেখানে ছোট একটি দোকান করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন আলমগীর হোসেন(৪২)। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধের পাঁচ কিলোমিটার অংশ ভেঙে গেছে। সেইসঙ্গে ভেঙে গেছে আলমগীরের স্বপ্নও। দোকানটি ভেসে গিয়েছিল নদীতে। দু’দিনের আপ্রাণ চেষ্টায় ভাঙা দোকানটি কোনোরকমে দাঁড় করাতে পারলেও মালামাল হারিয়ে নিঃস্ব তিনি।

আলাপকালে আলমগীর হোসেন জানান, সিডর থেকে আম্ফান পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ বছরেও বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কেউই উদ্যোগ নেয়নি। দোকান ভেঙে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছি। ঈদে জামা-কাপড় কেনাতো দূরের কথা ঈদের দিন একটু সেমাই কেনার মতো সামর্থ্যও এখন আমার নেই।

দোকান থেকে ৭ মিনিটের পথ হাঁটলেই কাঁঠালিয়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিন সন্তান নিয়ে ঘরে বসে আছেন আলমগীরের স্ত্রী রেকসনা বেগম।

রেকসনা বলেন, ঝড়ের রাইতে মাইয়া পোলা লইয়া আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। সকালে খবর পাই আমার স্বামীর বেড়িবাঁধের দোকান আর নাই। এখন খুব অসহায় হয়ে পড়ছি। আল্লাহ ছাড়া আমাগো কেউ নাই।

আলমগীরের বাড়ি থেকে কিছুদূর এগোলেই দেখা হয় ইঞ্জিনচালিত ট্রলারচালক রফিকুল ইসলামের (৪৫) সঙ্গে। তিনি জানান, বিষখালী নদীর ওপারে তার একটি ট্রলার ছিল। সেই ট্রলারে নদীতে যাত্রী পারাপার করতেন তিনি। যা আয় হত তা দিয়েই চলতো সংসার। আম্ফানের রাতে তার ট্রলারের ওপর তীরের গাছ পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ট্রলারটি পাওয়া যায়নি। সেই থেকে রোজগার বন্ধ।

তিনি বলেন, আমার মতো অসহায় মানুষ এ গ্রামে আর নেই। ঈদের দিন সন্তানদের সামনে কী খেতে দেব জানি না।

তার আশঙ্কা বেড়িবাঁধ না থাকলে ঘরবাড়ি সব নদীতে যাবে। তখন গৃহহীন হয়ে পড়বেন তারা। তাই দ্রুতই বেড়িবাঁদ মেরামতের দাবি তার।

রফিক, আলমগীরের মতো কাঁঠালিয়া উপজেলায় এমন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অসংখ্য। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে এ উপজেলায় পাঁচ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে গেছে ছোট বড়, কাঁচা আধাপাকা ১৮০টি বসতঘর।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেছি। ইতোমধ্যে অনেকের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধটি নির্মাণের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। আশা করি দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন তারা।

আতিকুর রহমান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।