দুই মাস ধরে সবাইকে বিনা পয়সায় চা খাওয়ান এই নারী
করোনাভাইরাসের প্রভাবে সিলেটের সর্বত্র হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সন্ধ্যার পর প্রায় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকছে। বন্ধ থাকছে দোকানপাট। যারা মানুষের সেবার জন্য রাস্তায় সারাদিন থাকছেন তাদের কথা ভেবে প্রতিদিন রাতে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরীদের বিনামূল্যে চা-খাওয়ানো শুরু করেন এক নারী। তিনি আছমাহুল হাছনা খান।
পেশায় তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা। সিলেট নগরে টেইলার্স ও ফেব্রিক্সের ব্যবসা রয়েছে তার। স্বামীও একজন পোশাক ব্যবসায়ী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অঘোষিত লকডাউনের কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন তিনি।
তবে এই সময়ে ঘরে বসে থাকেননি হাছনা খান। বরং সিলেটে জরুরি সেবাদানকারীদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন তিনি। রাতে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় জরুরি সেবাদানকারীদের বিনামূল্যে চা-খাওয়ান তিনি। পুলিশ, নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সবাই নিচ্ছেন হাছনা খানের সেবা।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার সিলেট প্লাজা মার্কেটের সামনে প্রতি রাতে টুল নিয়ে বসে এই সেবা দিচ্ছেন তিনি। শুরু করেছেন সেই ২৫ মার্চ থেকে, যা চলছে এখনও। প্রতিদিন প্রায় ২০০ মানুষ হাছনা খানের কাছ থেকে ফ্রি চা-পানি পান করেন। ইতোমধ্যে জরুরি প্রয়োজনে নগরে রাতে চলাচলকারী সবার দৃষ্টি কেড়েছে তার এই মানবিক উদ্যোগ। কারও মাধ্যমে যাতে রোগ না ছড়ায় এজন্য তিনি ওয়ানটাইম গ্লাস দিয়ে চা-খাওয়ান।
বুধুবার (০৪ জুন) রাতে নগরের প্লাজা মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাক্সভর্তি চা ও কিছু ওয়ানটাইম গ্লাস নিয়ে বসে আছেন হাছনা খান। পাশে রয়েছে পানির বোতল। সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী অনেকেই এসে চা খেয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ফ্রি চা-খাওয়াচ্ছেন তিনি। নিজেও হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক আর মাথায় গাউন পরে আছেন।
দুই সন্তানের জননী হাছনা খান স্বামী-সন্তান নিয়ে সিলেট নগরের দক্ষিণ কাজলশাহ এলাকায় বসবাস করেন। ২০১৭ সালে সিলেট বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে সিলেট জেলায় সেরা রাঁধুনির পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
বাসায় চা তৈরি করে ফ্লাক্সে করে নিয়ে আসেন তিনি। এক ফ্লাক্স শেষ হলে বাসা থেকে আসে আরেক ফ্লাক্স ভর্তি চা। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন স্বামী, সন্তান ও ভাই।
আছমাহুল হাছনা খান বলেন, ৫টার সময় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ-সাংবাদিক, বিভিন্ন মার্কেটের নৈশপ্রহরীসহ জরুরি সেবাদানকারী অনেককে রাতেও কাজ করতে হয়। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় অনেক সময় তারা পানিও খেতে পারেন না। এই লোকদের কথা বিবেচনা করেই আমি ফ্রিতে চা-পানি খাওয়ানোর কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে বিকেল থেকে বসতাম। রমজান মাস শুরুর পর তারাবির নামাজের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা নিয়ে বসি। এখন আবার সন্ধ্যা থেকেই বসি।
করোনার দুর্দিনে কত মানুষ তো কতভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে। আমিও সামান্য কিছু করার চেষ্টা করছি। কিছু মানুষকে কর্মক্ষেত্রে মানসিক শক্তি জোগাতে সামান্য ভূমিকা রাখতে পারাটাও স্বার্থকতা।
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের এই সদস্য বলেন, প্রথম দিকে রাতে বসার ব্যাপারে কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হলেও এখন স্বাভাবিকভাবে অনেকে এসে চা খান। আমিও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করছি। কখনও ভিড় জমতে দিচ্ছি না।
আবারক আলী নামের এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, সারারাত জিন্দাবাজার এলাকায় মার্কেট পাহারা দেই। আগে রাতে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ থেকে চা খেতাম। এখন রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় হাছনা আপার মানবিকতার কারণে বিনা পয়সায় চা-খেতে পারছি। চা খেলে দেহ ও মন চাঙা থাকে। দোয়া করি; আপাকে আল্লাহ ভালো রাখুক।
ছামির মাহমুদ/এএম/পিআর