কক্সবাজারে করোনার ‘রেড জোন’ চিহ্নিত, ফের লকডাউন
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। রোগীর ক্রম অনুসারে কক্সবাজার সদর ও চকরিয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি। ফলে কক্সবাজার পৌরসভাসহ জেলার কয়েকটি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৪জুন) বিকেল থেকে চিহ্নিত এসব এলাকায় আগামী দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক। এ ১৪ দিনের কঠোরতায় করোনার প্রাদুর্ভাব না কমলে প্রয়োজন অনুসারে লকডাউনের সময় আরও বাড়তে পারে। ‘রেড জোন’ ঘোষিত এলাকা থেকে কেউ যেমন বাইরে যেতে পারবেন না, তেমন প্রবেশও করতে পারবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রেড জোন’ হিসাবে চিহ্নিত এলাকাগুলো সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ থাকবে। প্রয়োজনে লকডাউনকৃত এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষকে সরকারিভাবে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে প্রচেষ্টার কমতি নেই আমাদের। দরকার হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জরুরি কাজের সঙ্গে জড়িতরা ‘রেড জোনে’ সীমিত আকারে চলাচল করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নম্বর ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘ইয়োলো জোন’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাকি ১০টি ওয়ার্ডকে অতিমাত্রায় করোনা সংক্রমণের ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি থাকবে। কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলররা কমিটির প্রধান হবেন। প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে যুবক, ছাত্র, সমাজকর্মী নিয়ে একটি করে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হবে। কমিটিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তারা সার্বিক সহযোগিতা করবেন এলাকাবাসীকে।
যে দুটি ওয়ার্ড ‘ইয়োলো জোন’ হিসেবে চিহ্নিত সেখানেও সব কিছু চলবে সীমিত পরিসরে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে সকলকে। কক্সবাজার পৌরসভায় কোনো ওয়ার্ডকে ‘গ্রিন জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কারণ প্রতিদিন পৌরসভার কোনো না কোনো স্থানে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, করোনা আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলাকে তিনটি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলাকে ইউনিয়নভিত্তিক ও চারটি পৌরসভাকে ওয়ার্ডভিত্তিক বিন্যাস করে ম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলাতে ইউএনওগণ এ ম্যাপ করার দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার আটটি উপজেলাকে ইউনিয়নভিত্তিক এবং চারটি পৌরসভাকে ওয়ার্ডভিত্তিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এই তিনটি রঙয়ে ভাগ করা হয়। যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড করোনায় খুব বেশি সংক্রমিত বলে তথ্য রয়েছে সেগুলোকে ‘রেড জোন’ বা লাল চিহ্নিত এলাকা, যেখানে মাঝারি পর্যায়ে সংক্রমিত বলে তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোকে '‘ইয়েলো জোন’ বা হলুদ চিহ্নিত এলাকা এবং যেখানে একেবারে সংক্রমিত হয়নি সেগুলোকে নিরাপদ রাখতে ‘গ্রিন জোন’ বা সবুজ চিহ্নিত এলাকা হিসেবে ভাগ করা হয়েছে।
যে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড ‘গ্রিন জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করা হবে সেখানে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অন্যান্য নির্দেশনা মতো স্বাভাবিকভাবে চলতে হবে।
কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত (৪ জুন) ৮৯০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২০ জন। ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে ঝুঁকিতে। ইতোমধ্যে একজন রোহিঙ্গা মারা গেছেন, ৩০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/এমকেএইচ