করোনায় আক্রান্ত, তবুও মানবসেবায় কাউন্সিলর খোরশেদ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত রেখেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। পুরোপুরি সুস্থ না হয়েই তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল ছেড়ে নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর বাসায় বসে করোনাযুদ্ধে গঠিত টিম দিয়ে মানবসেবা করে যাচ্ছেন। মরদেহ দাফন থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবা দিচ্ছেন। তার পাশাপাশি তার নির্বাচনী এলাকার জণগনের জন্য ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য বিক্রিসহ বিনামূল্যে সবজি বিতরণ করছেন।
সোমবার (৮ জুন) করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘টিম খোরশেদ’ গঠনের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। তবে উপসর্গসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন ও সৎকার কার্যক্রমের দুই মাস পূর্ণ করল টিম খোরশেদ।
এদিকে দরিদ্র মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য ভর্তুকি দিয়ে ৩০ টাকা হালির ডিম ১২ টাকা হালি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাউন্সিলর খোরশেদ। তিনি ভর্তুকি দিয়ে ডিম বিক্রির পেছনে নানা কারণ উল্লেখ করেছেন।
কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, এ সময়ে মানুষের শরীরে পুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। তাই ডিমটা খুবই উপকারী। হাজার লোককে বিনামূল্যে ডিম দেয়া সম্ভব নয়। তাই দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের শরীরে পুষ্টি বৃদ্ধি করতে নিজে ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প মূল্যে ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর বিনামূল্যে সবজি বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
করোনাযুদ্ধে গঠিত টিম খোরশেদ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মত গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে দুইজন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হওয়ার দিন থেকেই টিম খোরশেদ প্রত্যক্ষভাবে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করে। ওই সময় মহানগরীতে ২০ হাজার লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। টিম লিডার খোরশেদ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জুমার নামাজে বক্তব্য দেন।
গত ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। ফলে সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জেও করোনা ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। বাজারে স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ায় একদিনেই সংকট সৃষ্টি হয়। টিম খোরশেদ ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী স্যানিটাইজার বানানো শুরু করে। আর ৫০ এমএলের ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার বোতল ২৫০ এলএলের লিকুইড হ্যান্ড ওয়াস সোপ তৈরি ও বিতরণ করা হয়। এ সময় প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি টিম খোরশেদের কাছ থেকে ফর্মূলা নিয়ে সারা জেলায় কমপক্ষে তিন লাখ স্যানিটাইজার তৈরি করে বিতরণ করে।
কাউন্সিলর খোরশেদ করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের গোসল, জানাজা, দাফন ও সৎকার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক, সিটি মেয়র ও সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করেন। তাদের অনুমোদনের পর কাজ শুরু করেন। গত ৮ এপ্রিল প্রথম করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া আফতাব উদ্দিনের দাফনের মাধ্যমে শুরু হয় কার্যক্রম। গত ৮ জুন পর্যন্ত ৭৪ জনকে দাফন ও সৎকার করেছে টিম খোরশেদ। এর মধ্যে ৩২ জন করোনা আক্রান্ত, ২৪ জন করোনার উপসর্গ, ও আটজন স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন ও সৎকার করা হয়।
কাউন্সিলর খোরশেদের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাকে ‘বীর বাহাদুর’ হিসেবে ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান। আর খোরশেদের কার্যক্রম দেখে তিনি ২০ লাখ টাকা ভালোবাসার উপহার পাঠান। কিন্তু খোরশেদ এমপি সেলিম ওসমানের ভালোবাসা নিয়ে কাজ করতে চান উল্লেখ করে উপহারের ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেননি।
করোনাকালে মানবসেবায় বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য কাউন্সিলর খোরশেদ দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে গত ৩০ মে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এতে তার টিমের সদস্যরা ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু কাউন্সিলর খোরশেদ ঘোষণা দিলেন- মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করোনা নিয়ে যুদ্ধ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। যত বাধাই আসুক না কেন সদলবলে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের করোনা প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।
শাহাদাত হোসেন/আরএআর/পিআর