বাজারে এসে সবাই জানলেন লকডাউন চলছে
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে বিকেল ৪টার পরই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী দোকানপাট বন্ধ করে বাড়ি চলে যান ব্যবসায়ীরা। সকালে দোকান খোলার চিন্তায় খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন সবাই।
কিন্তু ‘রেড জোন’ এলাকা চিহ্নিত করে সোমবার রাত ১০টার পরে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৫ (আংশিক), ৬, ৭ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারণা চলানো হয়। কিন্তু তখন বাজার শূন্য, মানুষজন বাড়িতে ঘুমে।
এর আগে রোববার ফেসবুকে লক্ষ্মীপুর জেলা পুরো লকডাউন এ ঘোষণা ভাইরাল হয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পালের বক্তব্য ছিল লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৫ (আংশিক), ৬, ৭ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, রায়পুর পৌরসভা, রামগতি পৌরসভা, রামগঞ্জ পৌরসভা, কমলনগরের কয়েকটি ইউনিয়ন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই জেলা দক্ষিণ তেমুহনী এলাকায় তথ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং করতে শোনা যায়। যদিও জনশূন্য ছিল পুরো বাজার।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত একটি গণবিজ্ঞপ্তি তার ফেসবুক পেজে লক্ষ্য করা যায়। তবে রাতের প্রচরণা ও সাংবাদিকদের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে মিল ছিল না। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১, ২ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডও লকডাউনের তালিকায় যোগ করা হয়।
সবমিলিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন নিয়ে জনমনে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসকের এই গণবিজ্ঞপ্তিতে পৌরসভার রেড জোন এলাকাগুলো স্থান পেলেও পায়নি অন্যান্য উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের নাম। অবশ্যই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তাদের স্ব স্ব উদ্যোগে পৌরসভা ও ইউনিয়ন লকডাউন করেছেন। এর মধ্যে কমলনগর উপজেলায় ১৫ জুন থেকে লকডাউন চলছে। তবে গত দুবারের চেয়ে এবার কঠোরভাবে চলছে লকডাউন।
অন্যদিকে সোমবার দিনভর লকডাউন সম্পর্কে জেলা প্রশাসকের ঘোষণা না পেয়ে পরেরদিন দোকান খোলার প্রস্তুতি নিয়ে রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
রাতে লকডাউন নিয়ে প্রচারণা যাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি; মঙ্গলবার সকালে দোকানপাট ও কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হন তারা। ঠিক তখনই জানতে পারেন পৌরসভায় রেডজোনভিত্তিক লকডাউন চলছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও ওষুধের ফার্মেসি ছাড়া বন্ধ থাকবে শহরের অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সচেতন মহল।
লক্ষ্মীপুরের চক-বাজার এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সোমবার সারা দিন লকডাউন নিয়ে জেলা প্রশাসকের ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। কিন্তু কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি। এর আগ থেকে ফেসবুকে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি চলছিল। মঙ্গলবার রাতে কখন প্রচারণা করা হয়েছে তা শুনেননি তারা। সকালে দোকান খুলতে এসে দেখেন বাজার লকডাউন।
জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৪৪ জনের করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪৮ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে জেলার রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার, কমলনগরের চরলরেন্স, চরফলকন, হাজিরহাট, তোরাবগঞ্জ, সদরের দক্ষিণ হামছাদী, দালাল বাজার, পার্বতীনগর, বাঙ্গাখাঁ, মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, কুশাখালী, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১, ২, ৫, ৬, ৭, ১১, ১৫ নং ওয়ার্ড, রায়পুর পৌরসভা ও রামগঞ্জ পৌরসভাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এসব এলাকাকে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করতে চলছে মাইকিং। জরুরি প্রয়োজন ও পরিষেবা ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, সব যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
কাজল কায়েস/এএম/এমকেএইচ