করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এসিল্যান্ডকে বাড়িছাড়া মালিকের
ঘরে আট মাসের কন্যাশিশুসহ চার বছরের যমজ ছেলে-মেয়েদের মায়া ত্যাগ করে মানবতার টানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ছুটেছেন জামালপুরের এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম।
করোনা প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভাড়া বাড়িতে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেয়ায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এই করোনাযোদ্ধা।
গত শুক্রবার (১৯ জুন) বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ায় জামালপুর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগমকে ভাড়া বাড়ি ছাড়তে হয়।
সংবাদ সম্মেলন করে অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে করোনাযোদ্ধা মাহমুদা বেগমকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলে বাসা ছাড়তে বাধ্য করেন বাড়ির মালিক আকলিমা খাতুন। তবে এসিল্যান্ড মাহমুদা বাসা ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জামালপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) হিসেবে যোগ দেন মাহমুদা বেগম। যোগদানের ১৫ দিন পরই বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এ অবস্থায় আট মাসের কন্যাশিশু মাহনুর মাশিয়াত ফালাক্ক, চার বছরের যমজ ছেলে তাহমিদ তাজওয়ার ও মেয়ে মুশাররাত ই উলফাতকে ঘরে রেখে করোনার সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে রাস্তায় নামেন।
করোনা বিস্তাররোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, গণসচেতনতা সৃষ্টি, অসহায় ও সঙ্কটাপন্ন মানুষের ঘরে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
দিনরাত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটেছেন মাঠে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে। ঘর-সংসার-সন্তান জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে সাহসী ভূমিকা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করায় ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অভিনন্দন বার্তা পেয়েছেন এসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম।
এরই মধ্যে গত ২ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন মাহমুদা বেগম। সেদিন থেকে ১৫ মে পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে, ১৫ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নেন শহরের দেওয়ানপাড়ার ভাড়া বাসায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাটা ভালোভাবে নেননি বাড়ির মালিক আকলিমা খাতুনসহ বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা।
ফ্ল্যাটে এসে রোজ দুধ দিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে আসতে নিষেধ করেন বাড়ির মালিকের ভাতিজা। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তাকে বাড়ি থেকে বের করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন বাড়ির মালিক। এসিল্যান্ডকে ফোনে নানা আজেবাজে কথা বলে তা রেকর্ড করে তারই বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন বাড়ির মালিক। এ অবস্থায় আত্মসম্মানের ভয়ে বাসা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
জামালপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যান্ড) মাহমুদা বেগম বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভাড়া বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নেয়াই ছিল আমার অপরাধ। সুবিধালোভীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অবৈধ কার্যক্রমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইন প্রয়োগ করায় একটি কুচক্রী মহল আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে। বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে আমাকে ভাড়া বাসা ছাড়তে বাধ্য করেছে তারা।
এএম/এমকেএইচ