‘দক্ষিণ এশিয়ায় আগ্রাসন ও ৫-জি ব্যবসার উদ্দেশে করোনা ছড়িয়েছে চীন’
দক্ষিণ এশিয়ায় আগ্রাসন ও ফাইভ-জি ব্যবসা করার উদ্দেশে চীন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে বরিশালে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি মানববন্ধন থেকে চীনকে দায়ী করে প্রতিবাদও জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে নগরীর সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ‘বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল বিভাগ’ এর ব্যানারে ওই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মজিবর রহমান খোকা নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটির নেতা বলে পরিচয় দেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত দত্ত লিটু। তিনি নিজেকে বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল বিভাগীয় শাখার সদস্য সচিব বলে পরিচয় দেন। এছাড়া কর্মসূচচিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা নারায়ণ চন্দ্র দে নারুসহ আরও কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে চীনকে বিশ্বের অন্যতম অশুভশক্তি উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের আগ্রাসন এবং ফাইভ-জি ব্যবসার করার জন্য করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনকে দায়ী করে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। একইসঙ্গে শের-ই-বাংলা মেডিকেলের চিকিৎসা সমস্যা আশু সমাধানের দাবিও জানানো হয়।
এদিকে হঠাৎ করে চীনবিরোধী এ মানববন্ধন বরিশালের সচেতন নাগরিকদের বিস্মিত করেছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সচেতন নাগরিকরা মনে করেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড চীনের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। তারা বলেন, সীমানা নিয়ে চীন-ভারতের মধ্যে বিরোধ চলছে। এটা দুই দেশের ব্যাপার। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কোনো বিবৃতি দেয়নি। দেশের কোথাও এ ধরনের উদ্ভট ও কাল্পনিক ইস্যু তৈরি করে কোনো প্রতিবাদ, স্লোগান কিংবা বিবৃতি কোনো সংগঠন দেয়নি। সেখানে বরিশালের মতো একটি শহরে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলমতকে পাশ কাটিয়ে যারা চীনবিরোধী মানববন্ধন করা হয়েছে। যারা করেছেন তারা বিচ্ছিন্ন চিন্তার মানুষ বলে আখ্যায়িত করেন সচেতন মহল।
সচেতন নাগরিকরা বলেন, এর আগে বরিশালে ‘বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল বিভাগ’ এই নামে কোনো সংগঠনের তৎপরতা দেখা যায়নি, এমনকি কোনো কমিটিও গঠিত কিংবা ঘোষিত হয়নি। এ অবস্থায় কয়েকজন লোক জড়ো হয়ে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করছেন। বিষয়টি বড়ই বেমানান। প্রশানের এসব বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত।
সচেতন নাগরিক কমিটি সনাকের বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বিরোধী আগ্রাসন ও ফাইভ-জি ব্যবসা করার উদ্দেশে চীন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে- এমন একটি কাল্পনিক অভিযোগ তুলে কয়েজন জড়ো হয়ে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেছেন শুনেছি। এর আগে এ ধরনের কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো কর্মসূচি কোনো সংগঠন পালন করেছে বলে জানা নেই। যেই সংগঠনের নাম দিয়ে বা ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বরিশালবাসী ওই সংগঠনের নাম আগে শোনেননি। কোনো তৎপরতা আজ পর্যন্ত বরিশালের মানুষ দেখেননি।
অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা বলেন, সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ভারতের সীমানা বিরোধ চলছে। এটা ওই দুই দেশের ব্যাপার। দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। আন্তর্জাতিক কোনো বিষয় নিয়ে কিছু করা আগে আমাদের ভাবা উচিত। যারা এমনটা করেছেন, তারা বিচ্ছিন্ন চিন্তার মানুষ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাব সভাপতি ও একটি আঞ্চলিক দৈনিকের সম্পাদক কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটি গোষ্ঠী এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে বাংলাদেশকে চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে। এর সাথে রাজনৈতিক কোনো দল বা সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের স্বার্থে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা উচিত।
কথিত বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল বিভাগীয় শাখার স্বঘোষিত সদস্য সচিব ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত দত্ত লিটু বলেন, কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই কমিটির নেতৃবৃন্দের নাম প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, সামান্য কারণে কমিটি ঘোষণায় দেরি হচ্ছে। এ সংগঠনের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকরা একজনকে আহ্বায়ক করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি আহ্বায়ক পদ নিতে সম্মতি না দেয়ায় বিষয়টি ঝুলে আছে। তবে এর মধ্যেই কমিটির পদ ও সদস্য প্রত্যাশীরা কর্মসূচির আয়োজন করেন। এর প্রেক্ষিতে কমিটি ঘোষণার আগেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সাইফ আমীন/বিএ