তিনি ছিলেন এক স্বপ্নদ্রষ্টা
দূরদর্শী ও চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন ইসরাফিল আলম। নির্বাচনী দুই উপজেলার প্রায় চার শতাধিক ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। অল্প সময়ে এলাকার মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। কিন্তু অকালেই তাকে বিদায় নিতে হলো।
জানা গেছে, এলাকার শিক্ষিত ও বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রানীনগর উপজেলায় ‘পল্লী শ্রী নিকেতন খামার, মাদার কেয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ইসরাফিল আলম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন’ এবং আত্রাই উপজেলায় ‘রবীন্দ্র জার্নাল সাহিত্য এবং রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য পতিসরে কৃষি ডিপ্লোমা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যেখানে প্রায় চার শতাধিক বেকার ও শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
২০১৫ সালের রানীনগর উপজেলার কাশিমপুরে প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর ‘পল্লী শ্রী নিকেতন খামার’ গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি, ব্রাহমা, ফ্রিজিয়ান, অস্ট্রেলিয়া ও সিন্ধু গরু, মেষ, ভেড়া, টার্কি, পাখি ও মুরগি। এছাড়া রয়েছে মাছের খামার, কেঁচো কম্পোস্ট সার ও মাশরুম এবং বিভিন্ন ফলের গাছ। প্রদর্শনী খামার দেখাশোনার জন্য প্রায় ৪০ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
পল্লী শ্রী নিকেতন খামার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন শাহিন সরদার। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে এই খামার তদারকির দায়িত্বে রয়েছি। যেখানে উন্নত জাতের গরু ও ছাগল পালন করা হয়। মাশরুম ও কেঁচো কম্পোস্ট সারের হাউস ৩২টি ও ১৪টি পুকুরসহ বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। যেখান থেকে এলাকাসহ অন্য জেলার মানুষ উপকৃত হন।
রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক ও গবেষক এম মতিউর রহমান মামুন বলেন, একজন আলোকবর্তিকা হঠাৎ করে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন। যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। তবে তার যে স্বপ্ন ছিল সেগুলো যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করতেন; এর মধ্য দিয়ে আমরা তাকে খুঁজে পেতাম।
গবেষক এম মতিউর রহমান মামুন বলেন, ইসরাফিল আলম একটি ‘রবীন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের’ স্বপ্ন দেখতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন তার পতিসরে কৃষিনির্ভর এলাকার কৃষকদের উন্নয়ন, শিক্ষা ও চিকিৎসার বিষয় নিয়ে ভাবতেন। রবীন্দ্রনাথের ভাবনার সঙ্গে ইসরাফিল আলমের ভাবনার অনেক মিল ছিল। সেই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। সরকার তার স্বপ্ন পূরণে পতিসরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করুক- এমনটা প্রত্যাশা করি।
১৯৬৬ সালে রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ইসরাফিল আলম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম। সেই সংসদে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। বর্তমান সংসদে ওই কমিটির পাশাপাশি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য তিনি।
সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম (৫৪)।
আব্বাস আলী/এএম/পিআর