চুয়াডাঙ্গায় দু’দলেই নতুন মুখ, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছেন দুজন কাউন্সিলর। দুজনই কাউন্সিলর পদে পরপর কয়েকবার নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড সৃষ্টিকারী। এদের একজন চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন ও অপরজন বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম মনি।
জাহাঙ্গীর আলম মালিক পরপর পাঁচবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। আর সিরাজুল ইসলাম মনিরও রয়েছে নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড।
চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে শনিবার (২৮ নভেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনকে মনোনীত করা হয়। এর একদিন পরই গতকাল সোমবার দুপুরে খবর পাওয়া যায় রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের দলীয় মনোনয়ন বাতিল করে জাহাঙ্গীর আলম খোকনকে মনোনীত করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে বর্তমান কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনিকে গতকাল বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে।
অনেকটাই আলোচনার বাইরে থাকা দুজনকে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল থেকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার বিষয়টি চুয়াডাঙ্গার প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন। আজকের মধ্যে আবার নতুন কিছু ঘটবে কি-না তা দেখার আগ্রহে প্রহর গুনছেন উৎসুকদের অনেকে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে গত শনিবার নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়। ওইদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তার নাম চূড়ান্ত হয়।
সোমবার জানা যায়, তার বদলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে দলটি।
অপরদিকে বর্তমান মেয়র জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত তথা নৌকার বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করেছেন, তাদের এবার মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে নির্দেশনা ছিল। বর্তমান মেয়র হয়েও ওবায়দুর রহমান চৌধুরী মনোনয়ন পাননি। শনিবার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হলেও পরে তার বদলে কেন অন্যকে মনোনীত করা হলো? এ প্রশ্ন উঠতে থাকে অনেকের মধ্যে।
সূত্র বলেছে, মনোনীত করার পর কেন্দ্র জানতে পারে, রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এ কারণেই সম্ভবত রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারকে পৌর নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার পরও তার বদলে জাহাঙ্গীর আলম মালিককে মনোনীত করেছে কেন্দ্র।
মনোনয়ন পাওয়া জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি পরপর পাঁচবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছি। এবার মেয়র পদে ভোট করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে দল অন্য দুজনের সঙ্গে আমার নামটিও কেন্দ্রে পাঠাই। দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি গতকাল সোমবার বিকেলে নিশ্চিত হয়েছি।’
অপরদিকে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সোমবার বিকেলে জেলা বিএনপির সদস্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামকে মনোনীত করেছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সন্ধ্যায় বিষয়টি জানিয়েছেন।
কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়েছে জেলা বিএনপি। মেয়র পদের জন্য দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মজিবুল হকের নাম তারা সুপারিশ আকারে কেন্দ্রে পাঠানোর পরও কেন বদলে গেল? এ নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহলের অন্ত নেই।
জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলার নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সর্বসম্মতিক্রমে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মজিবুল হকের নাম মেয়র পদে সুপারিশ করা হয়। যার নাম পাঠানো হয়নি, সেই সিরাজুল ইসলাম মনি কীভাবে মনোনয়ন পেলেন জানি না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এ প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের দ্বায় কেন্দ্রের। স্থানীয় বিএনপি কেন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তের দ্বায় নিতে পারে না।
এদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মনি বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও মিষ্টিমুখ করিয়ে পৌরবাসীর দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সালাউদ্দীন কাজল/এসআর/জেআইএম