করোনায় বসে না থেকে মাছচাষ, সফল নুরুজ্জামান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ০২ জানুয়ারি ২০২১

মহামারি করোনাকালীন বেকারত্ব দূর করতে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে শিং, কই জাতীয় মাছ চাষ করে সফল হয়েছেন রাজবাড়ীর বিদেশফেরত যুবক মো. নুরুজ্জামান মিয়া। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে খরচের তুলনায় লাভ প্রায় তিনগুণ। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় পরিধি বাড়ানোর চিন্তা করছেন এই উদ্যোক্তা। এজন্য স্বল্পসুদে ঋণ চান তিনি।

এদিকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে পরামর্শের পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে জেলা মৎস্য বিভাগ। তারা বলছেন, সঠিকভাবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে বর্তমানের চেয়ে জেলায় কয়েকশ টন মাছ বেশি উৎপাদন হবে।

Fish-(7).jpg

মো. নুরুজ্জামন মিয়া রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বানিবহ গ্রামের সফিউদ্দিন মিয়া হিরণের ছেলে। ১১ বছর সিঙ্গাপুর থাকার পর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে আসেন। মার্চে আবার সিঙ্গাপুরে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে যেতে পারেননি। ফলে বেকার হয়ে পড়েন। অলস সময় কাটছিল তার।

পরবর্তীতে ইউটিউব দেখে ছোট ভাই রিয়াদুস সালেহীনকে সঙ্গে নিয়ে মে মাসে নিজেদের পরিত্যক্ত জায়গায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছচাষের উদ্যোগ নেন। ১০ হাজার লিটারের দুইটি চৌবাচ্চার একটিতে ক্যাটফিশ জাতীয় শিং, কই ও অপরটিতে ট্যাংড়া মাছচাষ শুরু করেন। এ সময় জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি।

Fish-(7).jpg

হারবেস্ট অর্থাৎ বিক্রির উপযোগী (৪ থেকে ৬ মাস) পর্যন্ত এতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৬ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এখান থেকে আয় করা সম্ভব ৯০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা।

চৌবাচ্চা দুটিতে শিং ও কই ৬ থেকে ৭ মণ এবং ট্যাংড়া প্রায় ৪ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়। যার বর্তমান বাজারমূল্যও ভালো।

Fish-(7).jpg

মাছের খাবার হিসেবে দেয়া হয় মেগা ফিড, এফসিইউ আর সার্বক্ষণিক অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা হয় চৌবাচ্চায়। প্রথম পর্যায়ে লাভবান হওয়ায় বাড়ির পেছনের পরিত্যক্ত জায়গায় প্রায় ৩ লাখ অর্থাৎ ৫০ হাজার লিটারের ছয়টি চৌবাচ্চা করার উদ্যোগ নিয়েছেন নুরুজ্জামান মিয়া এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
অল্প জায়গায় কম খরচে কষ্ট ছাড়াই বায়োফ্লক পদ্ধতি লাভজনক হওয়ায় নুরুজ্জামান মিয়ার দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায়।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১০ জন চাষি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন এবং সবাই সফল। স্বল্প খরচে অল্প জায়গায় মাছচাষ লাভজনক হওয়ায় অনেক চাষিকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে মৎস্য বিভাগ।

Fish-(7).jpg

বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ গোলাম মোস্তফা বাচ্চু জানান, নুরুজ্জামান বিদেশ থেকে এসে করোনার কারণে আর যেতে না পেরে দুই ভাই মিলে এ ব্যবসা শুরু করেছেন। এ ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা বলে জেনেছেন। আশা করছেন, এলাকার বেকার যুবকরা আগ্রহী হয়ে এ পদ্ধতিতে মাছচাষ করে মাছের চাহিদা পূরণ করবেন। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কোনো সহযোগিতা লাগলে তিনি করবেন।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে সফল মাছচাষি মো. নুরজ্জামান মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ১১ বছর সিঙ্গাপুর থাকার পর ছুটিতে জানুয়ারিতে দেশে ফিরে আসি। ছুটি শেষে যখন সিঙ্গাপুরে ফিরে যাব তখন করোনার কারণে আর যেতে পারিনি। ফলে বেকার হয়ে পড়ি। তখনই ইউটিউব ঘাঁটতে গিয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছচাষের বিষয়টি আমার নজরে আসে।’

Fish-(7).jpg

তিনি বলেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চাষ করা মাছের স্বাদ দেশি মাছের মতো। সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিলে চাষের প্রসার আর বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে নুরুজ্জামানের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘জেলায় করোনাকালীন ১০ জন চাষি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদের সবাই ক্যাটফিশ চাষে বেশি আগ্রহী। তবে এ পদ্ধতিতে মাছচাষ করে বানিবহের নুরুজ্জামান লাভবান এবং তিনি সফল।’

Fish-(7).jpg

তিনি বলেন, সঠিকভাবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছচাষ করলে জেলায় বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে আরও প্রায় দুই থেকে আড়াইশো মেট্রিক টন মাছ বেশি উৎপাদন হবে। মাছচাষে ঋণ পেতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

রুবেলুর রহমান/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।