রক্ষা পাচ্ছে না মসজিদ মন্দির কবরস্থানও

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ফানাই নদী খনন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন নদীকূলের মানুষ। কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শতাধিক ঘরবাড়ি। রক্ষা পাচ্ছে না মসজিদ মন্দির কিংবা কবরস্থানও।

কুলাউড়া উপজেলার লংলা পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে হাকালুকি হাওরে গিয়ে মিলিত হয়েছে ফানাই নদী। পাহাড়ে উৎপত্তিস্থল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির গতিপ্রবাহ বেশি। ফলে বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর খননসহ প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির খননকাজ ও প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৭ কোটি টাকা।

হাকালুকি হাওর থেকে শুরু করে ৪০ কিলোমিটার নদীটি উপজেলার ভুকশিমইল, কাদিপুর, ব্রাহ্মণবাজার, রাউৎগাঁও, কুলাউড়া সদর ও কর্মধা ইউনিয়ন দিয়ে নদীটির খনন কাজ পাহাড়ি এলাকা মহিষ মারায় গিয়ে শেষ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যে নদীটির খননকাজ সিংহভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বড় বড় ইউটার্ন রেখে নদী খনন করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে পানির স্রোতে ভেঙে যাবে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন দেখা দেবে।

তাছাড়া কাজ চলমান অবস্থায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নদীগর্ভে ধসে পড়ছে। রাউৎগাঁও, কুলাউড়া সদর ও কর্মধা উইনিয়নে কমপক্ষে ৮টি ব্রিজ ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

jagonews24

রাউৎগাঁও ইউনিয়নে খনন কাজে নিয়োজিত মাটি কাটার এক্সেভেটর চালকরা জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। নদী খনন করতে গিয়ে রাউৎগাঁও ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার মুকন্দপুর রাস্তার মরহুম হাজী ছলিম মিয়ার বাড়ির সামনে থেকে ফানাই নদীর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা কেটে দেয়ায় চলাচলের পথও বন্ধ রয়েছে। ফলে চৌধুরী বাজারের সঙ্গে এই আঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কর্মধা ইউনিয়নের হাসিমপুর-রাঙিছড়া রাস্তা এবং হাসিমপুর কবিরাজি ইটসোলিং রাস্তাটিও কেটে সরানো হচ্ছে। ফলে এই দু’টি রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী মানুষ চরম দুর্ভোগের পড়বে।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি।

নদী খননের ফলে মুকন্দপুর কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র (স্থানীয়দের ভাষায় মক্তব) পূর্ব হাসিমপুর মসজিদ, পূর্ব হাসিমপুর কবরস্থান এবং পূর্ব কবিরাজি কালি মন্দির ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আনু মিয়া জানান, নদী খননের ফলে রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বাগাজুরা, মুকুন্দপুর, গুতগুতি, কবিরাজি, লক্ষ্মীপুর গ্রামের শতাধিক পরিবার জমি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ভিটামাটি সব চলে গেছে নদীগর্ভে। এখন এরা কোথায় যাবে।

কবিরাজি গ্রামের বিজয় মল্লিক, গুতগুতি গ্রামের ইদরিছ মিয়া ও মঞ্চব মিয়া জানান, নদী খননের ফলে আমরা ভূমি হারালাম। আমাদের বসতঘর, জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে খনন কাজের ফলে এলাকার গাছ, বাঁশ, খেত খামার উজাড় হচ্ছে। নদীর খনন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বিত্তবানদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করছেন। ইচ্ছামতো খননকৃত মাটি ফেলা হচ্ছে, কাজের সাথে সাথে ড্রেসিং না করায় শত শত পরিবার মাটির স্তূপে বন্দি।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, কুলাউড়া উপজেলা র্নিবাহী অফিসারসহ আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছি। কাজে কোথাও কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নদীর ভেতরে যাদের বাড়িঘর পড়েছে তারা স্বেচ্ছায় সরে যাচ্ছে। তাছাড়া যারা দীর্ঘদিন থেকে দখল করে ছিল তাদের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। আমরা কাউকে উচ্ছেদ করছি না।

এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।