‘আলোর পথে বিদ্যানিকেতন’ খোলার অপেক্ষায় তারা
মা পুষ্প দাস (২৯) ও মেয়ে সুষ্মিতা দাস (৮) পড়েন আলোর পথে বিদ্যানিকেতনে। দুজনই দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের এ বিদ্যালয়টি। এতে তারা একদিকে যেমন পড়া ভুলে যাচ্ছেন তেমনি অন্যদিকে অনেকেরই ঝরে পড়ার শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রামের বাইপাস মোড়ে অবস্থিত ‘আলোর পথে বিদ্যানিকেতন’ একটি সেবামূলক বেসরকারি স্কুল। এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিনা পয়সায় লেখাপড়া করেন নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা। শিশুদের সাথে প্রায় ৫০ জন নিরক্ষর মাও এখানে লেখাপড়া করেন।
স্কুল বন্ধ থাকা নিয়ে পুষ্প দাস বলেন, ‘এবার তৃতীয় শ্রেণিতে উঠতাম। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে স্কুল। তাই দ্বিতীয় শ্রেণিতেই রয়ে গেছি। পাঠশালা বন্ধ থাকায় ভুলে যাচ্ছি অনেক পড়া। আমরা চাই দ্রুত স্কুল খুলে দেয়া হোক।’
নগরীর ছোটবনগ্রাম প্রফেসর পাড়ার বাসিন্দা আবু জাফর এটি গড়ে তুলেছেন। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা জাফর পেয়েছেন একাধিক চাকরি। ঢাকায় চাকরিতে যোগও দিয়েছিলেন। পরে ছেড়ে চলে এসেছেন। এই শিশুদের মায়া উপেক্ষা করে কোথাও থাকতে পারেননি তিনি।
আবু জাফর জানান, করোনায় বন্ধ হওয়ার আগে তিনটি শিফটে এই পাঠশালায় ক্লাস নেওয়া হতো। সকাল ৮ থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত শিশু শ্রেণি, সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলতো তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস।
স্থানীয়রা জানান, জাফর ও তার ভাই মিলে একটি ইলেকট্রনিক্স দোকান চালান। সেই দোকানের আয় থেকেই বহন করা হয় পাঠশালার ব্যয়। তারা শিক্ষার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবা দেয়ার কাজও করে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে পাঠশালায় দুই একবার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেয়া হয়।
দীর্ঘ ৬ বছর ধরে একাই স্কুলটি চালাচ্ছেন আবু জাফর। এ কারণে নানান সঙ্কট আর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাঠশালার জমির জন্য বছরে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। সেই সাথে পাঁচজন শিক্ষককে দিতে হয় কিছু সম্মানি। যদিও নামমাত্র সম্মানি নিয়ে স্বেচ্ছায় শ্রম দেন তারা। তবুও এর সবটাই ব্যয় করেন জাফর।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, চারটি রুমে সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীর জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রয়েছে বেঞ্চের অভাব। এছাড়া টাকার অভাবে পাঠশালায় বৈদ্যুতিক সংযোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। ছোট্ট একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানের আয় থেকে এ প্রতিষ্ঠান চালানো আমার পক্ষে অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমএইচআর/জিকেএস