জয়পুরহাটে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
একদিন পরই পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। এই ধাপে জয়পুরহাট পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারই প্রথম এই পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এ উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাও শেষ। ভোটারদের প্রত্যাশা তারা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে নগরপিতা নির্বাচিত করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৫২ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৫ হাজার ৬১৭ জন এবং নারী ২৬ হাজার ৮৫৬ জন। ভোটকেন্দ্র ২২টি।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার ফেরদৌস আলম বলেন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পৌরসভাজুড়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি টহল রাখা হবে। আশা করি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
নির্বাচন ঘিরে পৌরসভায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ভোটারদের দাবি- তাদেরকে যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
এদিকে নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ শামছুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জগ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের সাবেক শহর আমীর ও সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান হাসিবুল আলম এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ডা. দেওয়ান মুহাম্মদ জহুরুল ইসলাম। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭০ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬ জন প্রার্থী।
প্রচারণা শুরুর পর থেকেই তারা পৌরবাসীর দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকার নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিছিল আর গণসংযোগে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন কর্মী সমর্থকরা। চলছে মাইকিংও। পৌর এলাকার সর্বত্রই এখন ভোটের আমেজ বিরাজ করছে।
শান্তিনগর এলাকার হাবিবুর রহমান, মুবতাসিম রাহাত, আদর্শপাড়া এলাকার রুহুল আমিন, নতুনহাট এলাকার সোহেল হোসেন জানান, নির্বাচন আসলেই প্রার্থীরা নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নেন। তবে এবার তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চান। তাদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করবে প্রশাসন।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, মানুষের সেবা করা ইবাদতের অংশ বলে মনে করি। ছোটবেলা থেকেই ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে মানুষের পাশে থেকে সবার জন্য কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মান রাখতে সাধারন মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি। ফোর লেন রাস্তা বাস্তবায়ন, আধুনিক শিশুপার্ক নির্মাণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত পৌরসভা গড়ে তুলব।
তিনি আরও বলেন, পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ আবার আমাকে ভোট দেবে। পাঁচ বছর আগে জয়পুরহাট পৌরসভার জনগণ আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। আমি গত পাঁচ বছরে যে উন্নয়ন করেছি, বিগত ৪০ বছরেও তা হয়নি। আশা করি, জনগণ এসব বিচার করে আগামীতে জয়পুরহাট পৌরসভার উন্নয়নের ধারাবহিকতা অব্যাহত রাখতে আমাকে আবারও জয়যুক্ত করবেন।
বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামছুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। সুষ্ঠু পরিবেশ ভোট হয়, তাহলে আমি নির্বাচিত হব।’
জগ প্রতীকে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসিবুল আলম বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে যেভাবে জনগণের পাশে ছিলাম, মেয়র নির্বাচিত হলেও সেভাবে জণগণের পাশে থাকব। এছাড়া ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করব। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি জিতব ইনশাআল্লাহ।’
হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নৈতিক পতন, চলমান ইসলামী দলগুলোর সুমহান ইসলামী আদর্শের বিচ্যুতিঘটা, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক জীবনে দারিদ্রতা, বেকারত্বের অভিশাপ, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণসহ নৈরাজ্যে মানুষ অতিষ্ঠ। এই হীন অবস্থা থেকে জাতির মুক্তির জন্য নেতা ও নেতৃত্বে নীতির পরিবর্তনের স্লোগানকে সামনে রেখে পাড়া-মহল্লা ও মসজিদে গিয়ে আমি ভোট চাচ্ছি।’
রাশেদুজ্জামান/এএএইচ/এএসএম