পাইকগাছার কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

পূর্ণিমার প্রভাবে পাইকগাছার নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে গত দু’দিনে এলাকার কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া দাকোপ উপজেলায় পৃথক দুটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। খলিষা এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে পানি প্রবেশ বন্ধসহ ২১ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানা গেছে। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্ণিমার প্রভাবে গত দুদিন এলাকার শিবসা, কপোতাক্ষ, কড়ুলিয়া, দেলুটি ও জিরবুনিয়াসহ সব নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে গত দুদিনে এলাকার কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে মাছসহ কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ জানান, রাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া-খেশরা নতুন ব্রিজের পাশে পুরাতন খেয়াঘাট এলাকা থেকে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের প্রবল স্রোতে প্রায় ৫০ ফুট বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে মৎস্য, কৃষি ফসল ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সোলাদানা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জানান, একই সময়ে শিবসার জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নের সোলাদানা খেয়াঘাট সংলগ্ন গুচ্ছগ্রাম তলিয়ে যায়।
দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, বুধবার দুপুরে জিরবুনিয়ার প্রকাশ মন্ডলের লিজ নেয়া ঘেরের কলগই এলাকা থেকে দেলুটি-জিরবুনিয়া নদীর প্রবল জোয়ারের স্রোতে ১০ হাত এলাকা জুড়ে বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে।
পাটকেল পোতা গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোলাদানা ইউনিয়নের পাটকেল পোতা সানাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওয়াপদার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গত দুদিনে প্রায় ৬০ হাত এলাকা জুড়ে বাঁধের কিছু অংশসহ নদী গর্ভে চলে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এজন্য আমরা এলাকাবাসী চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, বুধবার সকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক করেছি। বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বাঁধ সংস্কারের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বাঁধ মেরামত ও সংস্কারের জন্য অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে, দাকোপ উপজেলার পৃথক দুটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। খলিষা এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে পানি প্রবেশ বন্ধ সহ ২১ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের অধীন পানখালী ইউনিয়নের খলিষা এলাকায় গত সোমবার আনুমানিক ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। বুধবার সকাল পর্যন্ত ওই স্থান দিয়ে নদীর পানি ঢুকে পানখালী ইউনিয়ন এবং চালনা পৌর এলাকার চারটি গ্রামের ফসলের মাঠ লবণ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চাষিদের আনুমানিক ১ হাজার বিঘা জমির ধানসহ তরমুজ এবং সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ৩৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তরমুজ ২.৬৯ হেক্টর, মুগডাল ০.৬৭ হেক্টর, ধান ১ হেক্টর, ভুট্টা ০.১০ হেক্টর ফসলি জমির ফসল নদীর পানিতে ডুবে ২১ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকার পরিমাণ কৃষকদের ক্ষতি সাধন হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ্বাস বলেন, ‘ভেঙে যাওয়া বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। ফলে আপাতত পানি ঢোকার সম্ভাবনা নাই। স্থায়ীভাবে বাঁধটি টেকসই করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ চাষিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।’
আলমগীর হান্নান/এসজে/এএসএম