১০ লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা মাত্র একটি!
সর্বশেষ আদম শুমারি অনুযায়ী খুলনাসহ বিভাগের ১০ জেলায় জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৭ লাখ। সেই হিসাবে ৯ লাখ ৮১ হাজার মানুষের বিপরীতে সরকারি তিনটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউতে শয্যা সংখ্যা মাত্র একটি। অর্থ্যাৎ আইসিইউতে একটি মাত্র শয্যার জন্য লড়তে হচ্ছে দশ লাখ মানুষকে। একজন মারা না গেলে অথবা ভালো হয়ে চলে না গেলে অন্য রোগী পাচ্ছেন না শয্যা।
শয্যা সংখ্যার চিত্র যতটা ভয়াবহ তার চেয়ে বেশি ভয়াবহ আইসিইউ পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকায় থাকা অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকদের। তিন জেলার সরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছেন মাত্র তিনজন অ্যানেসথেসিয়ান।
সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই অবস্থার কারণে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত ব্যয় করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। যা রোগীর স্বজনদের জন্য দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের নিচতলায় ১০টি শয্যা থাকলেও দ্বিতীয় তলায় তিন মাস আগে আরও ২০টি আইসিইউ শয্যা করা হয়। কিন্তু সেই ঘর এখন তালাবদ্ধ। ধুলোর আবরণ পড়েছে শয্যাগুলোতে। সারিবদ্ধভাবে শয্যা রাখাও হয়। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন সার্পোট আর হাই ফ্লু ন্যাজাল ক্যানোলের দেখা না পাওয়ায় দ্বিতীয় তলার আইসিইউ আর আলোর মুখ দেখেনি।
২০টি শয্যা যখন আর্বজনার স্তূপের মতো পড়ে আছে তখন ডেডিকেটেড হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ছে ‘সিট খালি নাই’ লেখাটি। ফলে আইসিইউ সেবা পেতে দূরদূরান্ত থেকে করোনা রোগীরা যতই এখানে আসুক না কেন তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে একজন রোগীর মৃত্যু অথবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার।
করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটি, খুলনার সমন্বয়কারী ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, যে রোগী বেডে উঠেছে তাকে তো আর নামিয়ে দেয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ভালো হচ্ছে অথবা মারা যাচ্ছে। এই সময় পর্যন্ত অন্য রোগীদের বিছানার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।
এদিকে বিভাগের ১০ জেলায় বেসরকারিভাবে করোনা রোগীদের জন্য খুলনার গাজী মেডিকেল, সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাতক্ষীরার সিবি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে পাঁচটি করে। তবে সেখানে প্রধান অন্তরায় নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন।
সাতক্ষীরার সি বি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির খুবই প্রয়োজন। যন্ত্রপাতি ছাড়া সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে দিনকে দিন।
বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীরা আইসিইউর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারকদের সিদ্ধান্তহীনতায় কারণে। দেড় কোটি মানুষের জন্য মাত্র ১০টি আইসিইউ শয্যা, এটা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মতোই।
তবে এক বছরে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে আমূল পরিবর্তন দাবি করে খুলনা বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, প্রতিটি জেলাতেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত শয্যাও রয়েছে।
আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম