বরিশালে শনাক্তের হার বেড়ে ১৪ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বাড়তে থাকা করোনার সংক্রমণ বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বরিশাল বিভাগে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আবারও খারাপ হচ্ছে। বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে বিভাগে নতুন করে ৫০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ১৪ শতাংশের বেশি।
তবে গত দুই দিন আগেও বিভাগে শনাক্তের হার ছিল মাত্র ৬ শতাংশ ৬ ভাগ। আর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে পিরোজপুর জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। খুলনার বাগেরহাট জেলার সীমান্তবর্তী পিরোজপুর জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে বরিশাল জেলা। এ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর কার্যালয়ের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। কার্যালয়ের সবশেষ তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৪.৭ শতাংশ। ১৬ জুন (বুধবার) ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ছিল ১২ শতাংশ। গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) বরিশাল বিভাগে ৩৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ছিল ৬.৫ শতাংশ।
এদিকে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া দু’জনরই বাড়ি বরিশাল জেলায়। তারা হলেন- বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার মো. ওবায়দুল্লাহ (৫০) ও উজিরপুর উপজেলার আব্দুস সালাম (৫০)। গত ২৪ ঘণ্টায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময় উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৫ জন।
এদিকে তৃতীয় পর্যায়ে ৭৬ হাজার ৮০০ ডোজ চীনে উৎপাদিত টিকা সিনোভ্যাক্স বুধবার বরিশাল এসে পৌঁছেছে। বিভাগে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৩০৩ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশালের বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, তৃতীয় ধাপে বিভাগে মোট ৭৬ হাজার ৮০০ ডোজ চীনে উৎপাদিত সিনোভ্যাক্স টিকা পাওয়া গেছে। আমরা সেই টিকা গ্রহণ করে তা যথানিয়মে সংরক্ষণ করেছি। অগ্রাধিকার তালিকাতে যারা আছেন, তাদের মধ্যে এই টিকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা পেলে আগামী সপ্তাহ থেকে দেয়া শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুলনার বাগেরহাট জেলার সীমান্তবর্তী পিরোজপুর জেলায় সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। পাশাপাশি বরিশাল জেলায় সংক্রমণের সংখ্যা গত কয়েকদিনের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে যশোর, খুলনা, বাগেরহাটের সঙ্গে বরিশালের গণপরিবহন চলাচল করছে। এতে ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কিছুটা থেকেই যাচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা, শনাক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) নেয়া, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, শতভাগ নাগরিকের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার বিষয়ে সব সময়ই জোর দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতীয় ধরন ঠেকাতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে বরিশাল নগরীতে আসা ১৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষকে নিজে সচেতন হবার পাশাপাশি অন্যকে সচেতন করতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এমআরআর