ঝিনাইদহে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ৯ জনের, আক্রান্ত ১১৭
ঝিনাইদহে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে করোনার সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনায় সাতজন ও উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ১১৭ জনের। ঝিনাইদহে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
এদিকে এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ হাজার ৬৩৮ জনে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৮৮৮ জন। আর করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের।
এছাড়া এখন পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ৭০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৬৩ জন। এদের মধ্যে ৪৭ জন করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে ১৬ জন ভর্তি রয়েছেন।
ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামীম কবির জানান, বুধবার ঝিনাইদহে মৃত্যুর সংখ্যা একটু বেশি রয়েছে। আর নমুনা পরীক্ষার তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যাটা কিছুটা কম। তবে জনগণ যদি আরো সচেতন হয় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার অনেক কমে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, যাদের শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ তাদের হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর অনেকেরই তাদের নিজ বাড়িতে আলাদা কক্ষে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সবসময় তাদের খোঁজ-খবর রাখছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঝিনাইদহে করোনা সংক্রমণ রোধে মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের বিশেষ লকডাউন। লকডাউনের প্রথমদিন শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সকালে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।
বুধবার বেলা ১১টায় শহরের পায়রা চত্বর, পোস্ট অফিস মোড়, হামদহ, চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ড, আরাপপুর স্ট্যান্ড, হামদহসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের চলাচল ছিল বেশি। এদিকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও চলাচল করছে ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা ও মোটরসাইকেল। তবে ওষুধের দোকান ব্যতীত অন্যান্য সব দোকান বন্ধ রয়েছে।
লকডাউনের মধ্যে বাইরে বের হয়েছেন কেন?- জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘লকডাউনের প্রথমদিন কেমন চলছে তা একটু ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করবো। এ কারণে বাইরে বের হওয়া।’
রিকশাচালক সাইফুল রহমান বলেন, ‘সরকার লকডাউন দিয়েছে। আমাদের ঘরে খাবার দেবে এমন কোনো কথা তো বলেনি। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে রাতে বাজার করে বাড়ি যাই। এরপরই আমার পরিবারের পাঁচ সদস্য খাবার খেতে পারে। তাদের মুখে একটু খাবার তুলে দিতে এ লকডাউনের মধ্যে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। আর কিস্তির বোঝা তো আছেই, ভাই।’
ইজিবাইকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখে পুলিশ শহরের পায়রা চত্বর থেকে যাত্রী নামিয়ে দেয়। এদের মধ্যে নুরজাহান নামের এক নারী বলেন, ‘ছোট ছেলে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে শুনতে পারি ঝিনাইদহে লকডাউন দিয়ে দেবে। লকডাউন দিলে তো কোথাও বের হতে পারবো না। তাই ডাক্তার দেখিয়ে একটু মায়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আজ বাড়ি ফিরছি. পুলিশ এখন বলছে, লকডাউন শুরু চলাচল করা যাবে না। এরপর আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল। এখন বাড়ি যাবো কীভাবে?’
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন মো. মজিবর রহমান জানান, ঝিনাইদহে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় এক সপ্তাহের লকডাইন চলছে। লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে প্রশাসনের একাধিক টিম।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসএমএম/এমএস