রিফাত শরীফ হত্যার দুই বছর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ১১:২৩ এএম, ২৬ জুন ২০২১

বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় বছর আজ (২৬ জুন)। ২০১৯ সালের এই দিনে সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাতকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে কিশোর গ্যাং ‘বন্ড বাহিনী’। এরপর বিকেলেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এ হত্যা মামলার রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়ায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিনি বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

ছেলেকে হারিয়ে এখনো কাঁদছেন রিফাতের বাবা-মা ও স্বজনরা। বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তার ফেলে যাওয়া স্মৃতি। ছেলের শোকে এখন শয্যাশায়ী মা।

রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, ‘রিফাত আমার একমাত্র ছেলে ছিল। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সুখের সংসার ছিল। মিন্নির কারণে আমার সেই সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। আমাদের ছেলে হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যকর হলে হয়তো কিছুটা সান্ত্বনা পাব। আদালত খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন এ মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হয়।’

মামলার বিচার কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন জানান, করোনার কারণে সব মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুত শুনানি হয় সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নেব।

রিফাতকে কুপিয়ে জখমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। দাবি ওঠে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। এ ঘটনার পরের দিন বরগুনা সদর থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ।

নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ছয় দিন পর এ মামলার প্রধান আসামি ‘বন্ড বাহিনী’ প্রধান সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর এ মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ১ অক্টোবর বিকেলে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ক্যাটাগরিতে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এতে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ককে আসামি করা হয়।

২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। আর বাকি চারজনকে খালাস দেয়া হয়।

একই বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের ছয়জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন শিশু আদালত। এ ছাড়া চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিনি বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়। পরে নিম্ন আদালতের এ রায়ের পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। তবে করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় থমকে আছে এ মামলার বিচার কার্যক্রম।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।