করোনায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০১:১৪ পিএম, ০২ জুলাই ২০২১

করোনার কারণে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা। তাদের সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

বিশেষ করে যারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একটি বা চার-পাঁচটি গরু পালন করেছেন, তারা এ বছর উপযুক্ত দামে গরু বিক্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন।

ঈদের আর বাকি মাত্র ১৭-১৮ দিন। অথচ অন্যান্য বছরের মতো এখন পর্যন্ত দেখা নেই ব্যাপারীদের। কোরবানিযোগ্য পশুপালনকারী খামারিদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদের আগে হাটে পশু বিক্রি করে মুনাফা করবেন। কিন্তু তাদের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে মহামারি করোনাভাইরাস।

jagonews24

তারা বলেছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এবার গরু কেনায় আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না ব্যাপারীদের মধ্যে।

তাদের দাবি, করোনার কারণে বিগত বছরের চেয়ে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে অনুযায়ী, গরুর দামও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে জেলার সব পশুহাট বন্ধ রয়েছে। ফলে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

jagonews24

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের কোরবানির জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫৫টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ২৯ হাজার ৭৫০টি, মহিষ ১৮৯টি, ছাগল ৮২ হাজার ২৩৬টি ও ভেড়া ৭৮০ টি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৬১৩টি, আলমডাঙ্গায় ৩৮ হাজার ৭৮১টি, দামুড়হুদায় ২৬ হাজার ৪৮৫টি ও জীবনগরে ২৬ হাজার ৭৬টি পশু রয়েছে।

জীবননগরের বাজদিয়া গ্রামের আবু বক্কর বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি করে ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ একটি গরুর জন্য দিনে ১৩০-১৫০ টাকা খরচ হয়। প্রতিদিন গরুগুলোকে খৈল, ভুসি, কুড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার গরু বিক্রি করে লাভ করতে পারবো কি-না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। কিন্তু পশু বিক্রি না করতে পারলে সাত-আটমাস ধরে খাটানো টাকার অনেকটাই লোকসানে যাবে। পরের কোরবানি পর্যন্ত এসব পশুপালনে অনেক টাকা খরচ হবে।’

jagonews24

একই উপজেলার ঘুঘরাগাছি গ্রামের বিশারত আলী বলেন, ‘ছয়মাস আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুধু ভুসি ও খৈলই নয়, সব গো-খাদ্যের দাম গড়ে ২০-২৫ ভাগ বেড়েছে। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ার হতাশায় রয়েছি। অন্যবছর কোরবানির দুইমাস আগে থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু এ বছর তেমন কোনো ক্রেতা নেই।’

একই উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘সারাবছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত দুইমাস ধরে নিয়মিত হাট বসছে না। আর কোরবানির আগ মুহূর্তেও হাট বসার সম্ভাবনাও খুবই কম। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই ভালো ব্যবসার আশা করা যাচ্ছে না।’

সদর উপজেলার মমিনপুর গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় কোরবানির পশুর চাহিদাও অনেক কমে গেছে। অনেকে আবার স্বাস্থ্যবিধির কারণে পশু কেনা থেকে বিরত থাকছেন। ফলে এবার গরুর বাজার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

jagonews24

দামুড়হুদার জাহাজপুতা গ্রামের শাহিন রেজা বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি গরু কিনে বাড়িতে পালন করেছি। তবে গরুগুলো বিক্রি হবে কি-না এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। এবার কোরবানি কম হতে পারে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন গ্রামে কোরবানি উপলক্ষে গরুপালন করে থাকেন খামারিরা। তবে এখন পর্যন্ত বাজার ভালো আছে। আমাদের পক্ষ থেকে পশুপালনকারীদের প্রাকৃতিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খামারিরা সেভাবে পশুপালন করেছেন। প্রাকৃতিক উপায়ের তুলনায় রাসায়নিকভাবে মোটাতাজা করলে খরচ বেশি হয় এবং ঝুঁকিও থাকে। গ্রামপর্যায়ে পশু পালনকারীরা এসব বুঝতে পেরেছেন। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের কার্যক্রম একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি।’

সালাউদ্দীন কাজল/এসএমএম/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।