নড়াইল সদর হাসপাতালে দেয়া ৪ ভেন্টিলেটর যন্ত্র এখনো বাক্সবন্দি
শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে ছয় মাস আগে আসে দুটি ভেন্টিলেটর। এর দুই মাস পর আসে আরও দুটি ভেন্টিলেটর। কিন্তু এগুলো এখনো পর্যন্ত বাক্সবন্দি অবস্থায় আছে। অথচ শ্বাসকষ্টে ভুগে যথাযথ অক্সিজেন না পেয়ে ছটফট করতে করতে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে হাসপাতালটিতে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ভেন্টিলেটরগুলো চালানো গেলে হয়তো কতগুলো জীবন বাঁচানো যেত।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৩ ডিসেম্বর এই হাসপাতালে স্থাপনের জন্য দুটি ভেন্টিলেটর যন্ত্র পাঠায় কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেয়া হয় আরও দুটি ভেন্টিলেটর। এর মধ্যে বাক্সবন্দি অবস্থায় দুটি রাখা হয়েছে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অফিস কক্ষের বারান্দায়, অন্য দুটি একতলা ভবনের করোনা ওয়ার্ডের মধ্যে। হাসপাতালে সম্প্রতি চালু হয়েছে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন নাছিমা আকতার বলেন, ‘এ হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাই আমরা দুটি ভেন্টিলেটর সেখানে দিয়েছি। এখন চালু করার দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়কের।’
বিষয়টি জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুস শাকুর বলেন, ‘দুটি ভেন্টিলেটর করোনা ওয়ার্ডে চালু হয়েছে। অন্য দুটি চালু করতে সিএমএসডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
এদিকে, হাসপাতালে কোনো ভেন্টিলেটর এসেছে কিনা জানেন না আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) এ এফ এম মশিউর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে কোনো ভেন্টিলেটর আসেনি।’
হাসপাতালের নিচতলায় করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে দায়িত্বরত নার্স (ইনচার্জ) বাসনা সাহার কাছে ভেন্টিলেটর চালুর কথা জানতে চাইলে তার মাথায় বাজ পড়া অবস্থা। তিনি বলেন, ‘দুটি ভেন্টিলেটর দেড়-দুই মাস আগে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে, তা আজ অবধি বাক্সবন্দি’। এটি চালানোর নিয়ম শেখাতে তিনদিন ঢাকা থেকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়েছে আমাকে। আমি প্রশিক্ষণের সময় বলেছি কিছু বুঝিনি। তখন সেখান থেকে বলা হয়েছে তারা এগুলো চালিয়ে দিয়ে যাবেন।’
এ বিষয়ে আবারও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্যাকেট বন্দি নেই, ইন্সটল (চালু) করা হয়েছে। দুই মাস আগে ঢাকা থেকে এসে ইন্সটল করেছে। ইন্সটল করার পর হয়তো প্যাকেট করে রেখে দিতে পারে। অন্য দুটি ইন্সটল করতে সিএমএসডি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইসিইউ শুরু না করলে ভেন্টিলেটর দরকার হচ্ছে না। এর চিফ (প্রধান) হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ শাহীনুর রহমান, তার সঙ্গে কথা বলেন।’
এ এইচ এম শাহীনুর রহমানকে (অ্যানেসথেসিয়া) ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাই আমার বক্তব্য। আমার নিজের কোনো বক্তব্য নেই।’
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের উপপরিচালক (পিঅ্যান্ডসি) মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মেসেজ পেলেই ভেন্টিলেটর চালু করার ব্যবস্থা করে দেই। চালু হয়নি এটা ফোনে জানালেও আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কয়দিন আগে বলার সঙ্গে সঙ্গে নওগাঁয় চালু করেছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুজন আইসিইউ বিশেষজ্ঞ জানান, আইসিইউ ছাড়াও ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা যায়। তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীদের অবস্থার অবনতি হলে, নিজে শ্বাস নেওয়ার শক্তি না থাকলে, জ্ঞান হারালে-এমন মরণাপন্ন রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে নিতে প্রয়োজন হয় ভেন্টিলেটর যন্ত্রের।
নড়াইল জেলা করোনা সংক্রমণের হার দেশের মধ্যে অন্যতম। গত সপ্তাহে নড়াইল সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। চিকিৎসাসংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে আনার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্টে ছটফট করে তাদের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় গত জুন মাসে সংক্রমণের হার ৮২ শতাংশও হয়েছে।
গত ১৫ দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও কয়েকজন। জেলায় গত বছর (২০২০ সাল) মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত (৩ জুলাই) করোনায় মৃত্যু ৫০ ও শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৩৫ জন।
হাফিজুল নিলু/এসজে/এমকেএইচ