তিল ধারণের ঠাঁই নেই বগুড়ার দুই সরকারি হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৪:৩২ পিএম, ১২ জুলাই ২০২১

বগুড়ার সরকারি দুই হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর চাপ। শতাধিক রোগী এ দুটি হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হতে আসছেন। তিল ধারণের ঠাঁই নাই হাসপাতালে। মেঝেতে অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশেষ বিবেচনা ছাড়া হাসপাতালে শনিবার থেকে নতুন কোনো রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। তবে এখনো করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় করোনায় ও উপসর্গে ১৪ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনজন ও উপসর্গে তিনজন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে করোনায় চারজন ও উপসর্গে আরও তিনজন মারা যান।

এছাড়াও বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৮টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩২৭ জন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে বর্তমানে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এক হাজার ৯২৭ জন। এদের মধ্যে শজিমেক হাসপাতালে ২৩৯ জন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২৮৪ জন ও টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৩ জন রয়েছেন। বাকিরা এক হাজার ৩১১ জন রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনা শুরুর পর বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা রোগীদের বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে অন্তত ২০টি। আছে আটটি আইসিইউ বেড।

একই ভাবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ২৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে অন্তত ২৫ টি। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল টিএমএসএস মেডিকেল ও কলেজে ২০০ আসন থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকার কারণে রোগী ১০৫ জনের বেশি ভর্তি করা হচ্ছে না।

hospital2

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, হাসপাতালের সিট সংখ্যা বাড়িয়েও আসলে সংকট মেটানো যাচ্ছে না। এতো রোগীকে তিন হাসপাতালে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। এ কারণে যেসব রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো তাদেরকে কাউন্সেলিং করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেবল আশঙ্কাজনক অবস্থার রোগীকেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। এতেও সংকট মিটছে না। ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি। তাদের সঙ্গে থাকছেন রোগীর স্বজনেরাও। বারান্দায়ও অনেক রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে রাখা হয়েছে। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার এবং নার্সরা।

হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রায় ২৮৪ রোগী ভর্তি আছে। শজিমেকে সিট খালি রয়েছে। এ কারণে আমরা শজিমেকে রোগী পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে সংকটাপন্ন রোগীকে আমরা ভর্তি করাচ্ছি।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, করোনা পজিটিভ রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালে থাকলে তাকে আমরা শুধু কাউন্সেলিং করেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখানে ২৫০ সিটের বিপরীতে ২৩৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তবে প্রতিদিন অনেক রোগীই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হতে আসছেন এই হাসপাতালে।

জেলার একমাত্র করোনা চিকিৎসার বেসরকারি হাসপাতাল টিএমএসএসের চিত্র সরকারি দুটি হাসপাতালের মতোই। এখানে চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এ কারণে টিএমএসএসে চিকিৎসা নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষ কম আসছেন। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানেও রোগীর চাপ বেড়েছে। করোনা রোগীদের ২০০ শয্যা থাকলেও এখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ৯৩ জন। নতুন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম না থাকার কারণে।

হাসপাতালটির মুখপাত্র ডা. আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের কোনো সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেই। সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন দেয়া হয়। আমাদের হাসপাতালের সিট ২০০টি হলেও অক্সিজেন স্বল্পতার জন্য আমরা বেশি রোগী ভর্তি করতে পারছিনা।

আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।