মায়ের অপেক্ষায় করোনা ওয়ার্ডের সামনে সারাদিন বসে থাকে শিশু সাব্বির

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২১

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনের বেঞ্চে একটি শিশুকে বসে থাকতে দেখা যায়। তার মুখে মাস্ক। হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের একটি বোতল। বারবার হাত পরিষ্কার করতে দেখা যায়। কখনো সে হাসপাতাল এলাকায় একা এদিক-সেদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কখনো মায়ামাখা মুখটা মলিন করে দাঁড়িয়ে থাকছে হাসপাতালের এক কোণে।

তাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও তার চোখ-মুখের মধ্যে কেমন যেন একটা বেদনার গল্প লুকিয়ে আছে বলে মনে হয়। এমন একটি দৃশ্য বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকালে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনে দেখা গেছে।

jagonews24

কথা বলে জানা যায়, তার নাম সাব্বির আহম্মেদ শাফিন (৫)। বাবার নাম সাইফুল ইসলাম। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায়। একটি কসমেটিকস কোম্পানিতে চাকরি করেন।

কিছুক্ষণ পর শাফিনের বাবা সাইফুল ইসলাম আসেন। এবার কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে আমাদের দিনগুলো ভালোই কাটছিল। কয়েক দিন আগে আমার স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। আজ ডাক্তার জানিয়েছেন, তার অবস্থা খুব খারাপের দিকে।’

jagonews24

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রীর করোনা ধরা পড়ার পর ছেলেকে গ্রামের বাড়ি দাদা -দাদির কাছে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বলেন, এখানে রাখা যাবে না। ওর জন্য এখানে যদি আবার কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়। এদিকে মাকে ছাড়া শাফিন বাড়িতে থাকতে পারছে না। মাকে করোনা সেন্টারে রেখে ও সারাদিন রোদের মধ্যে বসে মায়ের জন্য অপেক্ষা করে। আমিও রাতে ছেলের সঙ্গে এখানে বসে অপেক্ষা করি।’

jagonews24

শিশু সাব্বির আহম্মেদ শাফিন বলে, ‘আব্বু বলছে, মায়ের কি যেন একটা অসুখ হয়েছে। মাকে ওই ঘরে অনেকের সাথে রেখে এসেছে। আমাকে মায়ের কাছে যেতে দিচ্ছে না কেউ। আব্বু বলছে, আম্মু সুস্থ হয়ে বের হয়ে আসবে। তাই তো আমি এখানে মায়ের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করি। কিন্তু মা আসছে না। আমার মা কখন বের হয়ে আমার কাছে আসবে?’ এভাবে বলতে বলতে মায়ের জন্য কেঁদে দেয় শিশু সাব্বির।

jagonews24

করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক সেবিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘করোনা রোগীদের সেবা করতে এসে কত করুণ দৃশ্যই না দেখলাম! তবে ছোট এ বাচ্চাটির দৃশ্য আমাকে কাঁদিয়েছে। সারাদিন মায়ের জন্য মন খারাপ করে মুখটা মলিন করে একা একা বাইরে বসে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল কেঁদে কেঁদে ওর বাবাকে বলেছে, আমার মার কী হয়েছে, কখন আসবে আমার মা? এ দৃশ্য দেখে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।