সাগরে ইলিশের আকাল, হতাশ কলাপাড়ার জেলেরা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২১

সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ৩০ জুলাই। এখন চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। আগস্টের শুরু থেকেই ইলিশ শিকারে ট্রলার নিয়ে দলবেঁধে সাগরে যাচ্ছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জেলেরা। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না।

ফলে অধিকাংশ জেলেই ট্রলারের তেল ও শ্রমিক খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে গেল দুই-তিন দিন সাগরে নামছেন না। অর্থাভাবে দিন কাটছে তাদের। সাগরে মাছ না পেয়ে মহাজন ও পাওনাদারদের দেনা পরিশোধের চাপে বিপাকে পড়েছেন কলাপাড়ার জেলেরা।

jagonews24

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর, আলীপুর মৎস্যবন্দর, চাপলী, কুয়াকাটাসহ সবগুলো ঘাটে আসা জেলেরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

তবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলছে। কক্সবাজারের ফিশারিঘাটে ফেরা ট্রলারগুলো থেকে নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। আহরিত ইলিশের সিংহভাগই বড় ও মাঝারি সাইজের। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।

কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলে। উপজেলার কুয়াকাটা সংলগ্ন সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, ভরা মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ শিকারের আশায় প্রতিদিনই জাল, নৌকা, ট্রলার ও বরফ নিয়ে দলবেঁধে নদীতে ছুটছেন জেলেরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে ভেসে বেড়ালেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে চরম হতাশা নিয়ে তীরে ফিরছেন তারা। আলীপুর, মহিপুর মৎস্য বন্দরেও একই চিত্র।

patuakhali1

কুয়াকাটা সংলগ্ন গঙ্গামতি এলাকার জেলে মো. হান্নান মাঝি বলেন, ‘ইলিশের ভরা মৌসুমে প্রতিদিনই ৫-৬ জন জেলে নিয়ে সাগরে যাচ্ছি। প্রতিদিন ভোররাতে সাগরে যাচ্ছি। তীরে ফেরা হয় বিকেল ৩টার দিকে। কয়েকদিন ধরে মাত্র ৪-৫টি ইলিশ পেয়েছি। এই মাছ বিক্রি করে যে টাকা আসে, তা দিয়ে তেলের দোকান আর স্টাফদের বেতনও ওঠে না। সংসারের জন্য কোনো বাজার করতে পারি না।’

মহিপুর ঘাটে সাগর থেকে ফেরা মামনি-২ ট্রলারের মাঝি আব্দুল কুদ্দুস জানান, গত ২২ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সাগরে নামতে পারিনি। ২৩ জুলাই থেকে সাগরে নামা শুরু করেছি। কিন্তু ইলিশের দেখা নেই। গত ১০-১২ দিন আবহাওয়া খারাপ। মাছ উঠছে না জালে।

তিনি বলেন, মহাজনের কাছ থেকে প্রায় সোয়া দুই লাখ টাকার খাবার ও জ্বালানি নিয়ে সাগরে গিয়েছিলাম। আট দিন পর ফিরলাম। যা ইলিশ পেয়েছি, তাতে দেড় লাখ টাকা উঠবে। তাতে মহাজনের দেনা পরিশোধ করাও হবে না। ঋণ থেকে যাব প্রায় এক লাখ টাকা। তাহলে পরিবারের জন্য কি কিনে নিয়ে এখন বাড়ি যাব?’

patuakhali1

কুয়াকাটা মেয়র বাজারের আড়ৎদার মো. জসিম মৃধা জানান, ঢাকার পাইকার ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সারা বছর জেলেদেরকে জাল, সুতাসহ মাছ ধরার সব সরঞ্জাম কিনে দিতে হয়। এই মৌসুমে মাছ ধরে জেলেরা সেই টাকা পরিশোধ করেন। তারপরে তারা পাইকারদের দেনা ও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু জেলেরা সাগরে মাছ না পাওয়ায় তাদের টাকা দিতে পারছে না। ফলে তারাও ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন।

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়া যায়। তবে ভরা মৌসুমে এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ মিলছে না।’

তিনি বলেন, ‘মাছ না পাওয়ার অনেক কারণ হতে পারে। যেমন- ভৌগলিক কারণও হতে পারে। আবার সমুদ্রের যে চ্যানেলগুলো রয়েছে, সেগুলো পলি পেড়ে গভীরতা হারাচ্ছে। এখানে আন্ধারমানিকসহ যে কয়টা চ্যানেল রয়েছে, সবগুলোর একই অবস্থা। এ ব্যাপারে যদি এখন আরও গবেষণা করা হয়, তাহলে সঠিক কারণ জানা যাবে।’

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।