গ্রেফতারের পর আসামির বাড়িতে খাদ্য সহায়তা দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা
পিরােজপুরের মঠবাড়িয়ায় মরিয়ম বেগম (৩৮) নামের গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তার বাড়িতে পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে মঠবাড়িয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুল ইসলাম এ খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন।
গ্রেফতার মরিয়ম বেগম উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামের জাকির হােসেনের স্ত্রী।
পুলিশ সূত্র জানায়, জাকির হােসেন চালাকি করে ব্যবসার নামে স্ত্রীকে জামিনদার রেখে মঠবাড়িয়া ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। এরপর কৌশলে আরও বিভিন্ন এনজিও থেকে ৩০ লাখ টাকা নেন। পরে গােপনে সব জমিজমা বিক্রি করে দেন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করে তিনি মঠবাড়িয়া থেকে পালিয়ে যান। পরে জাকির ও তার প্রথম স্ত্রী মরিয়মের বিরুদ্ধে পিরােজপুর অর্থ ঋণ আদালতে এনজিওর পক্ষ থেকে মামলা করা হয়।
পরে মরিয়ম বেগম মাথা গােঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিন সন্তান নিয়ে নানা বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে থেকে অন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করে ও কাঁথা সেলাই করে সংসার চালাতে থাকেন। বেশিরভাগ দিনই তাদের না খেয়ে থাকতে হয়। পরে এনজিওর দায়ের করা মামলায় আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকলেও মরিয়ম বেগম ছিলেন এলাকাতেই।
সােমবার (৩০ আগস্ট) মঠবাড়িয়া থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জনাত আলী, উপ-সহকারী পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও লাবনী আক্তার আসামি মরিয়ম বেগমের বাড়িতে যান। পরে মরিয়মকে গ্রেফতার করা হয়।
মরিয়ম বেগমের সংসারের করুণ অবস্থা এএসআই জাহিদুল ইসলাম জাহিদকে নাড়া দেয়। মরিয়ম বেগমকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তার সন্তানরা কান্নারত অবস্থায় বলতে থাকেন, ‘আমরা এখন কিভাবে থাকবো, খাবাে কী? ঘরেতাে কিছুই নেই। আমাদের মাকে ছেড়ে দেন। মা কিছু করে নাই।’
এ কথাগুলা এএসআই জাহিদুলের কানে আসে। তবে তখন কিছু করার ছিল না এএসআই জাহিদুলের। আদালতের আদেশ মেনে মরিয়ম বেগমকে গ্রেফতার করতে হয়। থানায় মরিয়ম বেগমকে রেখে মঠবাড়িয়া বাজার থেকে ওই পরিবারের জন্য এক মাসের চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, সাবান, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, চিনি, চাসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা নিয়ে ওই বাড়িতে হাজির হন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এএসআই জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, মরিয়ম বেগম এতাে অসহায় না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না। তার অবর্তমানে এই সংসারের আহার জােগার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যতদিন মরিয়ম বেগম কারাগারে থাকবেন, ততদিন আমার রেশন দিয়ে এই পরিবারকে সহায়তা করে যাবো।
এসআর/জিকেএস