যমুনা সার কারখানার বর্জ্যে বিপর্যস্ত জীববৈচিত্র্য-জনস্বাস্থ্য

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানার বায়বীয় ও বিষাক্ত তরল বর্জ্যের দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য, হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সরকার পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে বিভিন্ন কারখানাকে শাস্তি দিলেও সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের দূষণ রোধে কোনো ব্যবস্থা দেখা যায় না। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।

সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা সার কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর তরল বর্জ্যের দূষণে তারাকান্দি, চরপাড়া, রামচন্দ্রখালী, কান্দারপাড়া, চেচিয়াবাঁধা, পলিশা, ঢুরিয়াভিটা, বৌশের চর, আদাচাকি, গাড়োডোবা, নিখাইসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। নির্গত তরল বর্জ্য জমে থাকছে কৃষি জমি ও স্কুলের মাঠে।

এছাড়া ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাস বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ায় ওই এলাকায় নিঃশ্বাস নেওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ী লিটন, শহীদ, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ফিরোজ আলম, বারীকসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ২৯ বছর ধরে এই দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি ছাড়াও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। ফসল ঘরে তোলার আগেই তা চিটা হয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত তরল বর্জ্য নিখাই বিল এবং সুবর্ণখালি নদীতে মিশে মাছসহ জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠে। বিষাক্ত মরা মাছ খেয়ে অনেক পাখিও মারা যাচ্ছে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

jagonews24

পোগলদিঘা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, কারখানার অতিমাত্রায় বায়বীয় গ্যাসের প্রভাবে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অক্সিজেন ঘাটতির মাধ্যমে এলাকাবাসী দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গর্ভবতী নারীরা। এছাড়াও গ্যাসের প্রভাবে শিশুদের সর্দি-কাশিসহ নানা ধরনের রোগবালাই লেগেই থাকে। নিকটস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অ্যামোনিয়ার কারণে প্রায়ই ক্লাস বন্ধ করে দিতে হয়।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিউটন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, অ্যামোনিয়া মিশ্রিত তরল বর্জ্য যখন পানির মাধ্যমে জমিতে প্রবাহিত হয়, তখন জমি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। ফসল উৎপাদন করার জন্য যে পরিমাণ পানির দরকার, সে পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানি সেখান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ফলে দিন দিন জমির উৎপাদন শক্তি কমে যায়। জমিতে সার দেয়া হলেও তা কাজে আসে না। এছাড়া পশু-পাখি, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করবে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।

তিনি আরও বলেন, সার উৎপাদনে যদি সরাসরি গ্যাস ব্যবহার করা হয়, তাহলে বায়ুমন্ডলে ব্যাঘাত ঘটবে। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাবে, গাছপালা নষ্ট হবে। ওই এলাকায় পশুপাখি থাকবে না। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে নানা ধরনের রোগ ছড়াবে।

jagonews24

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি বর্জ্য শোধনাগার তৈরির পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে যমুনা সার কারখানার জিএম (প্রশাসন) মঈনুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, মাটির নিচ দিয়ে অ্যামোনিয়ার যে তরল বর্জ্য নির্গত হয়, তা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে কারখানার পাশে তিন একর জমির উপর একটি লেগুন (পানি ধরে রাখার পুকুর) তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছি। জেলা প্রশাসনের অনুমোদন পেলে মাসখানেকের মধ্যে কাজ শুরু হবে।

এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।