ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত বরগুনার মেয়র প্রার্থীরা


প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে বরগুনায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ।

কনকনে শীতের মধ্যেও ঘাম ঝড়াচ্ছেন তিনি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট চেয়ে প্রচারণায় থাকছেন। আর জনসংযোগ ও পথসভায় ব্যস্ততম সময় পার করছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এস এম নজরুল ইসলাম। এছাড়ারও নির্বাচনী মাঠে জোরেসোরে প্রাচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সাহাদাৎ হোসেন এবং মো. শাহজাহানসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তিনজন, বিএনপির একক প্রার্থীসহ মোট ছয়জন, ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৪১ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ। বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সদ্য বিদ্রোহী প্রার্থী মো.শাহাদাত হোসেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বরগুনার সভাপতি ও দুবারের নির্বাচিত সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি মনোনীত একমাত্র প্রার্থী এসএম নজরুল ইসলাম। জাতীয় পার্টি মনোনীত আ. জলিল এবং এনপিপি মনোনীত মাহবুবুল আলম মান্নু।

৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ১৯৭৩ সালে গঠিত বর্তমানে প্রথম শ্রেণির বরগুনা পৌরসভার এবার নির্বাচনে মোট ভোটার ২২ হাজার ৫৮ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ২শ` ৬৮ জন এবং নারী ভোটার ১০ হাজার ৭শ` ৯০ জন।

বরগুনা পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার ও প্রচারণা এখন তুঙ্গে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়
জন প্রার্থী থাকলেও শক্তিশালী অবস্থানে থেকে নিজেদের প্রচার ও প্রচারণায় রয়েছেন চার প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ নানা কারণে এখন আলোচনা সমালোচনার শীর্ষে। সরকারদলীয় এ প্রার্থীর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগে ইতোমধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করেছেন বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেনসহ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এসএম নজরুল ইসলাম।

ভোটের দিন সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সহায্যে ভোট কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানান তারা। সম্প্রতি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগে সরকারদলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার।  

অন্যদিকে, সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাঙ্গে সম্পৃক্ত খেকে এবারের নির্বাচনে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মনোনয়ন যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সৌভাগ্যের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে বিগত উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনগুলোতেও দলের হয়ে বিশ্বস্থতার সঙ্গে সকল প্রকার ‘নির্বাচনী মেকানিজম’ পরিচালনা করেছেন তিনি।

সেদিক দিয়ে দলের একজন বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতা হিসেবেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মাঝে যথেষ্ঠ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকলেও অনিয়ম এবং দুর্নীতির তেমন কোনো অভিযোগও মহারাজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে বিতর্কিত করতে পারেনি বলে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের প্রথম এবং প্রধান সুযোগ হিসেবে এবারের নির্বাচনে জয়ী হতে সকল প্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ।

এছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সদ্য বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বরগুনা পৌরসভার উন্নয়নে দৃশ্যমান বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সফলভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হন। পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ায় বিগত বছরগুলোতে নিজস্ব যাকাতসহ নানাভাবে নিম্ন ও নিম্নবিত্ত পৌরবাসীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার কারণে এবারের নির্বাচনে তার অবস্থান গতবারের তুলনায় আরও সৃদৃঢ় হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

আর এসব কারণেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ এবং বর্তমান মেয়র ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেনের অবস্থান অনেকটা মুখোমুখি। সম্প্রতি মো. শাহাদাত হোসেনের একটি শান্তিপূর্ণ পথসভায় হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ অর্ধশত কর্মী-সমর্থককে আহত করেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজের কর্মী ও সমর্থকরা এমন অভিযোগ মো. শাহাদাত হোসেনের। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন ও তার কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকসহ তিনটি অফিস ভাঙচুরের পাশাপাশি একাধিক কর্মীকে হামলা চালিয়ে আহত করার পাল্টা অভিযোগও করেছেন অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ।

বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাড. মো. শাহজাহানও রয়েছেন শক্তিশালী অবস্থানে। এর আগে পরপর দুবার মেয়র পদে দায়িত্বে থাকাকালীন নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে তিনিও সর্বস্তরের পৌরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। এবারের নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী এবং সদ্য বিদ্রোহী ও বর্তমান মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের দ্বন্দ্ব সংঘাতের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহানও তার প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকটা সুকৌশলে।

এছাড়া দুই বিদ্রোহী প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগেরই তিনজন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিয়ে ভোট যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি মনোনীত একমাত্র প্রার্থী এসএম নজরুল ইসলাম। এর আগের নির্বাচনগুলোতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটা স্পষ্ট থাকলেও এবারের নির্বাচনে দলীয় কোন্দল অনেকটাই ম্লান বলে মনে করছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা। সেসব কারণে একটি সুষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠিত হলে এবং এন্টি আওয়ামী লীগ ভোটের সিংহভাগ বাগিয়ে নিতে পারলে অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে পারেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এসএম নজরুল ইসলাম এমন মন্তব্যও স্থানীয়দের।  

এবারের নির্বাচনে বরগুনা পৌরসভা থেকে প্রভাবশালী চার প্রার্থীর পাশাপাশি জাতীয় পার্টি মনোনীত আ. জলিল এবং এনপিপি মনোনীত মাহবুবুল আলম নামের অপর দুই প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনী মাঠে তাদের প্রচার ও প্রচারণা খুব একটা দেখা যায়নি।

আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনে বরগুনার চারটি পৌরসভার মধ্যে বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও বেতাগী পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন এ তিনটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সকলের দৃষ্টি থাকবে বরগুনা সদর পৌরসভার দিকে।

মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।