আজও অরক্ষিত শায়েস্তাগঞ্জের বধ্যভূমি, নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১
অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে বধ্যভূমি

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বধ্যভূমি। কয়েকটি পাকা পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে কেবল একটি সাইনবোর্ড বসানো বধ্যভূমিতে। এখনো গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণসহ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, সুশীল সমাজ, শায়েস্তাগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্বজনরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার এক শোকাবহ স্মৃতিচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে আছে উপজেলার রেল জংশনের পাশের এ বধ্যভূমিতে। এখানে পাকবাহিনী লালচান্দ চা-বাগানসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১ জনকে হত্যা করে গণকবর দেয়। এরা হলেন- রাজকুমার গোয়ালা, লাল সাধু, কৃষ্ণ বাউরী মেম্বার, দিপক বাউরী, মহাদেব বাউরী, অনু মিয়া, সুনীল বাউরী, নেপু বাউরী, রাজেন্দ্র রায়, গৌর রায় ও ভুবন বাউরী। এর মধ্যে শুধু অনু মিয়াই মুসলিম ধর্মের ছিলেন। শহীদ সবাই চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা বাগানের বাসিন্দা ছিলেন।

স্থানীয়রা বলছেন, এ শহীদদের যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া বাঙালি জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। সে বিবেচনায় শায়েস্তাগঞ্জের এ বধ্যভূমি উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মান পাওয়া থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমি রেললাইন সংলগ্ন হওয়ায় রেললাইন অতিক্রম করা ছাড়া সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়ক থেকে বধ্যভূমিতে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও ওই সড়কটি এখন সিএনজি অটোরিকশার দখলে আছে। এ সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচলের কোনো পরিবেশ নেই।

এ বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য তারকাঁটা দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছিল। যার অধিকাংশই ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, ফলে এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বধ্যভূমি।

অন্যদিকে, এ বধ্যভূমির পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ পাকা পিলার দিয়ে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত করে ঘিরে দিয়েছেন। এতে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত হলেও এর পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা নিশ্চিত হয়নি এখনো।

এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে এ বধ্যভূমি স্বীকৃতি পেয়েছে এবং গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বধ্যভূমি একটি আবেগ, ইতিহাসের অংশ, এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার।

তিনি আরও বলেন, পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক ওই বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। শায়েস্তাগঞ্জের বধ্যভূমি সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে এবং অচিরেই এর উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে খুবই আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। বধ্যভূমি সংরক্ষণে আমরা এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বধ্যভূমির ১১ জনের নাম সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের অন্যান্য উপজেলার মতো শায়েস্তাগঞ্জেও বধ্যভূমির উন্নয়ন হবে।

কামরুজ্জামান আল রিয়াদ/এসজে/এইচএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।