কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙর, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ চলাচলে শঙ্কা

আরাফাত রায়হান সাকিব আরাফাত রায়হান সাকিব , মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৭:২৫ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
শীতলক্ষ্যার প্রবেশমুখে যত্রতত্র জাহাজ নোঙর, ভয়-শঙ্কায় লঞ্চ চলাচল

বিভিন্ন শিল্প কারখানার কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙরে ভরে উঠেছে শীতলক্ষ্যা নদীর মুন্সিগঞ্জ অংশের প্রবেশমুখ। ফলে নৌপথটিতে এখন ভয় ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান। বেশি প্রতিবন্ধকতা ও বিপদের মুখে মুন্সিগঞ্জ-নারায়গঞ্জ এবং চাঁদপুর-নারায়গঞ্জ রুটে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলো। অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌরুটে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ২৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়া চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটের ১৬টি লঞ্চসহ শত শত নৌযান এই নৌপথ ব্যবহার করে।

কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙর, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ চলাচলে শঙ্কা

সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী থেকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর প্রবেশমুখে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যত্রতত্র নোঙর করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডজন ডজন কার্গো জাহাজ। বিশৃঙ্খলভাবে নোঙর করা জাহাজের কারণে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী লঞ্চসহ অন্য নৌযানকে। নোঙর করা জাহাজগুলোর ফাঁক-ফোকর দিয়ে যাতায়াতকালে একদিকে যেমন পড়তে হচ্ছে বিপত্তিতে, অন্যদিকে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সবসময় বিপদের চিহ্ন নিয়ে থাকতে হচ্ছে লঞ্চ যাত্রীদের। সন্ধ্যা নামলে অন্ধকারে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে বহুগুণ।

কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙর, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ চলাচলে শঙ্কা

বিষয়টি বারবার জানানোর পরও বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রী-চালকদের। এই নৌপথ নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত উপযোগী করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।

কয়েকজন যাত্রী বলেন, এমনিতেই বড় নদী, চলে ছোট লঞ্চ। ঢেউ এলে লঞ্চ দোল খেতে থাকে। তার ওপর এ সমস্যা, যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙর, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ চলাচলে শঙ্কা

তাসলিমা নামে এক লঞ্চ যাত্রী বলেন, একবার জাহাজের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লেগেই গিয়েছিল। কোনো রকমে বেঁচে গেছি। কদিন আগে এই কার্গো জাহাজের কারণে একটা লঞ্চ ডুবলো। দেখার কী কেউ নেই?

নজরুল আলম নামে একজন বলেন, লঞ্চে এ নৌপথে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত। দিন যত যাচ্ছে অবস্থা খারাপ হচ্ছে, নদীতে কার্গোর সংখ্যা বাড়ছে, এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙর, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ চলাচলে শঙ্কা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লঞ্চচালক বলেন, আমরা মালিকপক্ষের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে লঞ্চচালকদের দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু যেভাবে মাঝ নদীতে জাহাজ রাখা হয় তাতে আমাদের ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়। যাত্রীরাও বিপদে থাকেন, আমরাও বিপদে থাকি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনবল সংকটের কথা বলেন বিআইডব্লিউটিএর মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাজীব চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কার্যালয়কে জানিয়েছি। আমার ম্যানপাওয়ার, লজিস্টিক সাপোর্ট কিছু নেই।

কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙর, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ চলাচলে শঙ্কা

বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বাবুলাল বৈদ্য বলেন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌপরিবহন অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন সবার একটাই উদ্দেশ্য নৌপথ নিরাপদ রাখা। জাহাজ নোঙরে যেন সমস্যা না হয় সেজন্য শীতলক্ষ্যা মুখে লাল বয়া দিয়ে লঞ্চ চলাচলের পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। এই নৌপথে অনেক নৌযান চলাচল করছে, নদীর ধারণক্ষমতার ঊর্ধ্বে নৌযান চলাচল করে। আমরা যতটুকু পারছি মনিটরিং করছি। যারাই নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নিয়মিত মামলাও করা হচ্ছে।

কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙর, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ চলাচলে শঙ্কা

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, এ নৌপথে যেসব নৌযান চলাচল করে তাদের মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। নদীপথে চলাচলে প্রচলিত যে নিয়ম-কানুন আছে সেটি যেন মেনে চলে এবং নিরাপদ একটি নৌপথ যেন আমরা উপহার দিতে পারি সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশেই বিভিন্ন শিল্প কারখানা, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের কার্গো জাহাজগুলো যেন তারা নির্দিষ্ট স্থানে নোঙর করে সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করা হবে।

এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।