হাকালুকি হাওরে কমছে দেশি প্রজাতির মাছ
মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর। বিশাল এই হাওরে একসময় ছিল ১১২ প্রজাতির মাছের চারণক্ষেত্র। মাছের স্থায়ী অভয়াশ্রম না থাকা, সারা বছর নির্বিচারে মাছ শিকার এবং বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। বর্তমানে এই হাওড়ে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়।
স্থানীয় মৎস্যজীবী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। তবে এই প্রাকৃতিক কারণের চেয়েও মানুষের আগ্রাসী ভূমিকাই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিল ইজারা নিয়ে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়া নীতিমালা না মেনে বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রজাতির মাছ। বিলে পাবদা, কাকিলা, চিতল, ফলি, কালবাউসসহ বিপন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিললেও চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে এসব মাছ।

হাকালুকি হাওরের মাছ ব্যবসায়ী মোহন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, মাছের স্থায়ী অভয়াশ্রম না থাকা, সারাবছর নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার এবং বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় দিনদিন মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা আগের মতো মাছ পাই না।
হাকালুকি হাওর পাড়ের ভুকশিমহল গ্রামের সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে বিল ইজারা নেন। তাদের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত হাওরের বিলগুলোতে সুস্বাদু নানা জাতের মাছ ধরা পড়তো। এখনো শেষ রক্ষায় রুই, বোয়াল, আইড় মাছের পাশাপাশি চাপিলা, টেংরা, মলা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ওঠে জেলেদের জালে। প্রশাসনিক পদক্ষেপ জোরদার না হলে তা-ও হারিয়ে যাবে।

এলাকার মৎস্যজীবী ছয়ফুল মিয়া বলেন, হাওর ভরাটসহ নানা কারণে এবার মাছের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে গত বছরের চেয়ে হাওরে তুলনামূলক মাছ কম ধরা পড়ছে। যে কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব মাছ।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাসুদুল বলেন, মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে ছোট-বড় ২৩৮টি বিলে প্রায় ১১২ প্রজাতির মাছের চারণক্ষেত্র ছিল। বর্তমানে এই হাওড়ে ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রতি বছর মাছের পোনা অবমুক্ত করার মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছি হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার জন্য সব মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। ইজারাদারদের সচেতন করার জন্য মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে মতবিনিময় করে থাকি। তারা অনেক সময় ইজারা নীতিমালা লঙ্ঘন করেন। আমরা হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর আয়তনের হাকালুকি হাওরে প্রতিবছর ১৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে উৎপাদন কিছুটা কমলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। এবছর হাকালুকিতে (মৌলভীবাজার অংশে) এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। গত বছর যা ছিল সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন।
আব্দুল আজিজ/এমআরআর/এমএস