তল্লাশির নামে হয়রানি, জনতার হাতে অবরুদ্ধ তিন পুলিশ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৯:২৬ এএম, ২১ মার্চ ২০২২

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ইয়াবা দিয়ে এক ফার্মাসির মালিককে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা তিন পুলিশ সদস্যকে আধা ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।

শনিবার (১৯ মার্চ) রাতে কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের মধ্যভাগ বাজারের ‘নিউ মেডিসিন কর্নারে’ এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ওই ব্যবসায়ীকে হয়রানির বিষয়টি তদন্ত করে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় মোটরসাইকেলে আদমপুরের মধ্যভাগ বাজারের নিউ মেডিসিন কর্নারে সাদা পোশাকে আসেন কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, এসআই হারুনুর রশীদ চৌধুরী ও কনস্টেবল আফসার উদ্দীন। ফার্মাসিতে গিয়ে তারা মালিক স্বপন কুমার সিংহকে বলেন, দোকানে ইয়াবা বিক্রি হয় বলে খবর আছে তাদের কাছে। তাই ফার্মাসিতে তল্লাশি করবেন।

তখন ফার্মাসির মালিক মাদক বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করলে পুলিশ সদস্যরা বাগবিতণ্ডা শুরু করেন। একপর্যায়ে নিজেদের সঙ্গে আনা কয়েক পিস ইয়াবা হাতে নিয়ে ফার্মাসিতে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন। তখন ফার্মাসির মালিক স্বপন কুমার সিংহ এর তীব্র প্রতিবাদ করেন।

এ সময় আশপাশের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ফার্মাসির মালিক একজন ভালো মানুষ ও সেখানে কোনো মাদক বিক্রি হয় না বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। এতে পুলিশের দুই এসআই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পুলিশের সঙ্গে কথোপকথনে স্থানীয় জনতার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করে সড়ক অবরোধ করেন ও এমন হয়রানিমূলক তল্লাশির প্রতিবাদ জানান।

প্রায় আধাঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর জনতার রোষাণল থেকে বাঁচার জন্য ‘তথ্যগত ভুলের কারণে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা’র দায় স্বীকার করে তিন পুলিশ সদস্য দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

অবরুদ্ধের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফার্মাসির ভেতরে সাদা পোশাকে এসআই হারুন, এসআই সিরাজ ও কনস্টেবল আফসার দাঁড়ানো। তাদেরকে বিক্ষুদ্ধ লোকজন ঘিরে রেখেছেন। আর স্থানীয় এলাকাবাসী ফার্মাসির সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।

ভিডিওতে আরো দেখা যায়, এসআই হারুনুর রশীদ উত্তেজিত জনতাকে আশ্বস্ত করছেন ভুল তথ্যদাতাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেন স্থানীয়রা।

ফার্মাসির মালিক স্বপন কুমার সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ হঠাৎ এসে নাপা সিরাপ আছে কি না জানতে চায়। আবার তখনই বলে এখানে মাদক বিক্রি হয়। তখন আমি প্রতিবাদ করলে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ঘটনা দেখেছেন এবং তারাও প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান।

আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের স্বপন কুমার সিংহ একজন ভালো মানুষ। এর আগেও তিনি আদমপুর বাজারে ছোট একটি ফার্মাসির ব্যবসা করেছেন। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারের জন্য পুলিশি তল্লাশির ঘটনায় লোকজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে বলে তিনি শুনেছেন।

তবে কমলগঞ্জ থানার এসআই হারুনুর রশীদ ফার্মাসিতে তল্লাশির কথা অস্বীকার করে জানান, তিনি অন্য একটি মামলার কাজে পার্শ্ববর্তী বনগাঁও গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে মধ্যভাগ বাজারে জটলা দেখে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, মাদকদ্রব্যের অভিযানে পুলিশ গিয়েছিল। তবে স্থানীয়দের দাবি ফার্মাসির মালিক স্বপন কুমার সিংহ মাদকের সঙ্গে জড়িত নয়। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

আব্দুল আজিজ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।