পাহাড়ি নদীর পানিতে ডুবলো হাওরের ২০০ হেক্টর জমির ধান
সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে টানা দুদিন কাজ করেও রক্ষা করতে পারলেন না নজরখালি বাঁধ। বাঁধ ভেঙে কৃষকদের সামনেই ভেসে গেছে তাদের সোনার ফসল। শনিবার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়ি নদী পাটলাইয়ের পানি বেড়ে নজরখালি বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে চোখের পলকে ডুবে যায় ৮২ গ্রামের কৃষকদের প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ফসল।
জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার জলাভূমির হাওর হিসেবে খ্যাত হলেও হাওরের কান্দাগুলোতে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে জয়পুর, গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, রংচি ও স্বপনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। তবে বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি নদীর পানি ঢুকলে ফসল ডুবে যেতে পারে, এমন শঙ্কায় ছিলেন কৃষকরা।
তারা বাঁধ মেরামতের দাবিও তুলেছিলেন। কৃষকদের দাবির মুখে হাওরের তিনটি বাঁধ মেরামতের জন্য সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড আট লাখ টাকা বরাদ্দও দেয়। তবে গেলো দুদিন নদীতে আগাম পানি আসায় টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে জয়পুর গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে দিনরাত কাজ করছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে পানিতেই তলিয়ে গেলো কৃষকের ধান, সঙ্গে মিলিয়ে গেলো তাদের স্বপ্নও।

হাওরপাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের কৃষকরা বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নজরখালি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। ৮২ গ্রামের মানুষের কষ্টের ফসল বোরো ধান তলিয়ে যায়। আমরা শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ধর্মপাশার রংচি, রূপনগর ও অন্যন্য গ্রামের প্রায় শতাধিক লোক নজরখালি, নাওটানা ও গনিয়াকুড়ি গ্রামের মানুষ বাঁধটি যাতে না ভাঙে সেজন্য স্বেচ্ছায় কাজ করেছি।
স্থানীয় কৃষক সামির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঋণ করে এই বছর বোরো ধান করেছিলাম কিন্তু আগাম নদীর পানি এসে বাঁধ ভেঙে আমার ধান তলিয়ে নিয়ে গেছে। এখন আমি ঋণ কী করে শোধ করবো এবং সংসার কী করে চালাব সেই চিন্তায় আছি।
স্থানীয় কৃষক রহিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এত কষ্ট করে ধান করলাম অথচ একটা ধানও ঘরে তুলতে পারলাম না। এখন কী করে সংসার চলবে সেই চিন্তায় আছি। ৮২টি গ্রামের মানুষের কষ্টের ফলানো ধান ডুবে গেছে।

কৃষক তাজির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে বোরো ধান চাষ করেছি। স্বপ্ন ছিল বৈশাখে ধান তুলে মেয়ের বিয়ে দেবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন পানিতে তলিয়ে গেলো।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে বোরো চাষাবাদ খুবই কম। নজরখালি বাঁধ ভেঙে ২০০ হেক্টরের মতো ধান ডুবেছে। এ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শনি ও মাটিয়ান হাওরের বাঁধের ওপর চাপ কমেছে।’
লিপসন আহমেদ/এএএইচ