অচাষকৃত উদ্ভিদের ব্যতিক্রমী মেলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০২২

গ্রামের বসতবাড়ির আশপাশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে নানা গাছ ও লতাপাতা। এগুলো আগাছা বা পরগাছা হিসেবে অবহেলায় পড়ে থাকে। এসব উদ্ভিদ আমাদের জীবন ও পরিবেশের জন্য উপকারী। কোনোটি খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়, আবার কোনোটি ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে অচাষকৃত এসব উদ্ভিদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

অচাষকৃত এসব উদ্ভিদ সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের লক্ষ্যে মানিকগঞ্জে কিষানিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী ‘উদ্ভিদ পাড়া মেলা’।

‘উদ্ভিদবৈচিত্র্য রক্ষা করি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’ শীর্ষক মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের ঢাকুলী গ্রামে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বেসরকারি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বারসিক মেলার আয়োজন করে। এতে গ্রামের ৩৫ জন নারী তাদের বাড়ির আশপাশ ও পতিত জায়গায় বেড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদ প্রদর্শন করেন।

ঢাকুলী গ্রামের কিষানি সীমা বেগমের সভাপতিত্বে পাড়ামেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়।

jagonews24

তিনি বলেন, ‘এই গাছগুলো বাড়ির আনাচে-কানাচে, পতিত জমিতে বেশি হয়। এর প্রতিটি গাছের অনেক গুণাগুণ রয়েছে। গাছের কোনোটা আপনারা শাক হিসেবে খান, কোনোটার ওষুধি গুণ রয়েছে। আবার কোনোটা গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে এই খাদ্যগুলো নিরাপদ। পুষ্টিগুণেও ভরা। আমাদের এগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের চারপাশে এগুলো থাকলে তবেই না আমরা এগুলো খেতে পারবো। তাই এগুলো নষ্ট না করে সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিতে হবে।’

কিষানি রাবেয়া বেগম বলেন, ‘এই গাছগুলোর অনেক গুণাগুণ আছে। আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানি না। যারা জানে তারা বেশি বেশি খায়। আমরাও হাত-পা কেটে গেলে দূর্বার রস দেই, কচুর রস দেই, রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যায়।’

শাহানাজ বেগম নামের একজন বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। চর থেকে নানা ধরনের শাক তুলে আনি। হেচি শাক, কলমি শাক, বৈথা শাক, কচু শাক, কচুর লতি মাঝে মাঝেই খাই। গরুর ঘাস কেটে আনি। এতদিন নিজের দরকার হইতো তাই এগুলো আনতাম। আজ জানলাম এই গাছের এতগুণ আছে। আমাগো গ্রামে এ ধরনের মেলা আগে কোনোদিন হয় নাই। আমার খুব ভালো লাগছে। আমি এখানে ২০ ধরনের গাছ নিয়া আইছি।’

সভাপতি সীমা বেগম তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই গাছের অনেক উপকারিতা আছে। সব গাছই কোনো না কোনো উপকারে আসে। অকারণে এগুলো নষ্ট করুম (করবো) না। আমাগো প্রয়োজনেই আমরা এই গাছ সংরক্ষণ করুম (করবো)।’

jagonews24

পাড়ামেলায় গ্রামীণ নারীরা যেসব গাছ প্রদর্শন করেন সেগুলো হচ্ছে-আগুনজ্বালা, কচুরিপানা, তামাকটুলী, সোনাতুলী, বউটুনী, গোড়া হেচি, ফুল হেচি, আগড়া, ঘাওপাতা, তেলাকুচ পাতা, ভাদাইল, মটমটি, চিনিগুড়া, কাঁটাখুরা, খসখসা ডুমরা, আদারি কচু, কেশুরজা, হাতিশুঁড়া, পাহাড়ি জঙ্গল, বিশজারণ, ঢেঁকিশাক, ছিটকী, জোহানী পাতা, তৈল কন্টু, শোল পাতা, ভেন্না, কানাইলা/কানিলা, পিপল, টেকা খারকুন, দুধ কচু, গুলাল পাতা, কল্পনাথ, বাশক, বাকশা, ভাটি, বিলাই এচড়া, ডেমি/গীমা, নুনকুটে, চুতরা, পাথরকুচি, দূর্বা, চেরচেরী, গইচা, কৈটুরা, বৈথা, ওলটকম্বল, কালা কচু, কচুর লতি, নাকফুল, জগডুমড়া, করচা, দন্ডকোলস, বেরাটি, মরিচগাছ, টব বাগুন/তিত বেগুন, লাল মধু, শন, বিষকাটালী, হামা ঘাস, খেলনা কপি, সাদা ফুল, মাইক ফুল, কলমি, বড় কলমি, রূপি, ইচাঝুরি শাক, খেতা শাক, ছোবা ঘাস, খারকুন, পাট মাদারী, গন্ধফুল, বিন্না, তেতুলা পানা, ঝাল ফুল, হরহরি, নেটাপেটা শাক, জল হেচি।

মেলায় ৩৫ জন নারী মোট ৭৮ জাতের বিভিন্ন ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদ প্রদর্শন করেন।

সর্বোচ্চ ৫৬ ধরনের অচাষকৃত শাক, ওষুধি গাছ ও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন গাছ প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অর্জন করেন আমেনা বেগম।

বি.এম খোরশেদ/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।