ভালো নেই জাতিসংঘের ‘রিয়েল হিরো’ আঁখি
ভালো নেই জাতিসংঘের ‘রিয়েল হিরো’ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত খুলনার রূপসা উপজেলার কিশোরী আঁখি। সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত তার পরিবার। সবকিছু পেয়েও যেন কিছুই পায়নি সে। জমি নিয়ে জটিলতায় মিনি গার্মেন্টস করার স্বপ্নও স্বপ্নই রয়ে গেছে আাঁখির। করোনাকালে মাছ কোম্পানির শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে মাস্ক তৈরি করে বিতরণ করে যে আঁখি রিয়েল হিরোর স্বীকৃতি পেয়েছিলো সেই মাস্ক তৈরি করেই এখন চলছে তার জীবন জীবিকা।
এক সময় আঁখিকে নিয়ে মিডিয়া কর্মীরা সকাল বিকেল ব্যস্ত থাকলেও এখন আর কেউ তার খবর রাখে না। এমনকি জনপ্রতিনিধিরাও আর ফিরে তাকান না তার দিকে। আক্ষেপ করেই কথাগুলো বলেন আঁখির অসহায় বাবা মাসুদ মোল্লা। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক তৈরি ও গরিবদের মাঝে কম দামে বিক্রি করার জন্য জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃতি লাভ করে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের মাছুদ মোল্লার মেয়ে আঁখি।
আঁখির বাবা মাসুদ মোল্লা বলেন, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে আরো চার বাংলাদেশিসহ আঁখিকে এই ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এমন ঘোষণায় রীতিমতো সাড়া পড়ে সর্বস্তরে। নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা অতি সাদামাটা কিশোরী আঁখি হয়ে যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম। গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে আঁখি তার মতো অসহায়দের নিয়ে গার্মেন্ট কারখানা করার স্বপ্ন দেখে জানায়।
তার সেই স্বপ্ন পুরণে এগিয়ে আসেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী ও তার সহধর্মিনী সারমিন সালাম। আঁখির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে সেখানে গার্মেন্টস করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সালাম মুর্শেদী। পাশাপশি প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের গার্মেন্টস সরঞ্জামও দেন আঁখিকে। ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রূপসা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে ‘সালাম মুর্শেদী সেবা সংঘ’র মাধ্যমে আঁখিকে ফ্যাটলক, ওভার লক, প্লেন, স্টিচ ও কাটিং মেশিনসহ ১৫টি মেশিন প্রদান করেন এমপি। এসব সরঞ্জাম পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলো আঁখি।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এসব মালামাল রাখার জায়গার অভাবে সঙ্গে করে আর নিয়ে যাওয়া হয়নি। আঁখির স্বপ্ন আটকা পড়ে নৈহাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। এমপি সালাম মুর্শেদী আঁখির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি জমি পাইয়ে দিতে নির্দেশনা দেন রূপসা উপজেলা প্রশাসনকে। যেখানে আঁখির স্বপ্নের নীড়সহ গড়ে উঠবে একটি মিনি গার্মেন্টস। সে মোতাবেক উপজেলার ইলাইপুরে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গড়ে ওঠা আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি পাকা ঘরে ঠাঁই মেলে আঁখির পরিবারের। এমপির নির্দেশনা মোতাবেক ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের পাশে থাকা খাস জমি তাকে বন্দোবস্ত দেওয়ার লক্ষ্যে ভূমি অফিস থেকে মাপঝোপও করা হয়। করা হয় সীমানা নির্ধারণ। এরপর প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হতে গেলেও জমি বরাদ্দ কার্যক্রম সেখানেই আটকে গেছে।
এদিকে আঁখিসহ আরো ৬টি পরিবারের জন্য গড়ে ওঠা আশ্রয়ন প্রকল্পে নেই কোনো চলাচলের রাস্তা। যাতায়াত করতে হয় অন্যের বাড়ির ওপর দিয়ে। এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি এনে পান করতে হয় ওই পরিবারগুলোকে।
আঁখি জানায়, গার্মেন্ট কারখানা না দিতে পারায় সেই কোম্পানির মাস্ক তৈরি করেই চলছে তার। এক দেড় মাস পর পর একটা অর্ডার আসে মাস্ক তৈরির। সেখান থেকে মাসে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা আসে।
ছোট গার্মেন্টসের জন্য জমি দেখা হয়েছে জানিয়ে আাঁখি জানায়, কিন্তু এখনও জমির দলিল আমার কাছে আসেনি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের যে ঘর দেওয়া হয়েছে সেটাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। খালের পাশে হওয়ায় জমি প্রতিনিয়ত ভাঙছে। এছাড়া এই জমিতে যাতায়াত করতে হয় অন্যের জমির উপর দিয়ে। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় এটা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গার্মেন্টসটা করতে পারলে তাদের আর কোনো অভাব থাকবে না বলেও জানায় আাঁখি।
এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া তাছনিম বলেন, আঁখির স্বপ্ন পুরণে জমি বরাদ্দের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। জমি মেপে তাকে বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির কাগজপত্র আঁখির হাতে তুলে দেওয়া হবে। এছাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের রাস্তা ও টিউবওয়েলের যে সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধানে কাজ করা হচ্ছে।
এফএ/এমএস