দুর্নীতির ৩ মামলায় মানিকগঞ্জ মেয়র রমজানের বিচার শুরু
মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. রজমজান আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা তিন মামলায় চার্জ গঠন করেছেন আদালত। এসব মামলায় অভিযুক্ত আছেন পৌরসভার সাবেক কমিশনার হামিদুর রশিদ কাজল, ইকবাল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মট্টুও।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মানিকগঞ্জ স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজ উল্লাহ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৯৮ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ পৌর সুপার মার্কেটের দক্ষিণের জায়গা ভরাটের কাজ দেওয়া হয় মেসার্স মহুয়া কনস্ট্রাকশনের মালিক বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম মট্টুকে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে পৌর মেয়র রমজান আলী একই কাজ বারবার বর্ধিত করেন।
ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে ১৯৯৯ সালে পৌরসভার তহবিল থেকে ৪ লাখ ২২ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার ঘটনা প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ার তাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।
অন্যদিকে, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ কাঁচা বাজারের দক্ষিণ পাশের খাদ ভরাটের কাজও দেওয়া হয় আমিরুল ইসলাম মট্টুকে। পৌরসভার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়া স্বত্বেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে পৌর মেয়র রমজান আলী একই কাজ বারবার বর্ধিত করে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে করে তিন লাখ ২৫ হাজার ৩৩০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বাদী হয়ে পৌর মেয়র মো. রমজান আলী ও আমিরুল ইসলাম মট্টুকে আসামি করে ২০০৭ সালের ৩ মে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।
দুটি মামলাই তদন্ত শেষে ২০০৮ সালে ৩ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম।
আরও একটি মামলা সূত্রে জানা যায়, মেয়র রমজান আলী ও তৎকালীন পৌর সভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হামিদুর রশিদ কাজলের যোগসাজশে ২০০৪ সালে মানিকগঞ্জ পৌরসভার জিপ মেরামতের নামে দুটি চেকের মাধ্যমে এক লাখ টাকা অগ্রিম তুলে তা আত্মসাৎ করেন। এরপর ২০০৬ সালে হামিদুর রশিদ কাজল জিপ মেরামতের জন্য দুটি চেকের মাধ্যমে আরও এক লাখ টাকা অগ্রিম তুলে তা আত্মসাৎ করেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে আসামি করেন পৌর মেয়র রমজান আলী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মো. হামিদুর রশিদ কাজল, মেঘনা মটর ওয়ার্কসের প্রোপাইটার মো. আব্দুল আওয়াল ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মো. ইকবাল হোসেনকে। ২০০৮ সালে ৩ ডিসেম্বর আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
দুদকের আইনজীবী স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজ উল্লাহ বলেন, মামলাগুলোর কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত ছিল। সম্প্রতি হাইকোর্টে বিভাগ নির্দেশ দিয়েছেন মামলাগুলো চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার। নির্দেশ মতো, মামলাগুলো আদালতে উত্থাপন করার পর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মানিকগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচারক সিনিয়র স্পেশাল জজ জয়শ্রী সমদার বিশেষ মামলা ৪ ও বিশেষ মামলা ৫ এর চার্জগঠন করেন।
পিপি আরও বলেন, মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, চার্জশিট, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারার জবানবন্দিসহ নথিস্থ কাগজাপত্র পর্যালোচনা করে আসামীদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার ১ থেকে ৩ নম্বর সাক্ষীদের প্রতি সমন ইস্যু করেন। ৫ জুন সাক্ষীর তারিখ নির্ধারণ ছিল। মামলার বাদী মো. আব্দুল মাজেদ নির্ধারিত তারিখে আদালতে সাক্ষী দিতে আসেন। ওই দিন আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, আসামি পক্ষ থেকে মামলাটি হাইকোর্টে রিভিশন করা হয়েছে। এ কারণে আদালতে মামলার কোনো সাক্ষী গ্রহণ করা যাবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক ১৪ জুন হাইকোর্টের আদেশের কপি আদালতে দাখিল করার আদেশ দেন আসামিপক্ষের আইনজীবীকে। ১৪ জুন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিভিশনের কপি দাখিলের জন্য আবারও সময় জানালে আদালত ২১ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
দুদকের মামলার চার্জ গঠন বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে হয়রানির জন্যই মামলাগুলো করা হয়েছিল। দুদক যে অভিযোগ এনেছে তার কোনোটিই সত্য নয়। আদালতেই এসব বিষয়ে মোকাবিলা করবো।
বি.এম খোরশেদ/এসজে/এমএস